ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ১০৪ জন। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ১৫১ জনে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৮৪ জনে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) গাজা উপত্যকায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ৭৭,০৮৪ জন আহত হয়েছে। যথাযথ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে আহত প্রায় ৭০ হাজার শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আর নিখোঁজ ও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে আরও অনেকে।
চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য বিভিন্ন পক্ষ নানা কথা বললেও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি।
এদিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা উত্তর, মধ্য এবং পূর্ব গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল ঘিরে ফেলেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে বসবাসরত পরিবারগুলো বেশ কয়েকবার তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই এখন দক্ষিণে রাফাহ সীমান্তে আটকে আছে। রাফাহতেও ইসরায়েল হামলা করছে।
এছাড়া বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে যারা দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যাচ্ছে তারা প্রায়শই উপত্যকাটির অন্যান্য অংশে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না। বিশেষ করে ব্ল্যাকআউটের সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় খাবার ও পানির অভাবে ক্ষুধার্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, “গাজার এই পরিস্থিতিকে ভয়ংকর।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (টুইটার) এক পোস্টে সংস্থাটির প্রধান বলেছেন, “গাজার উত্তরাঞ্চলে হাসপাতালগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। খাবারের অভাবে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। শিশুরা গুরুতর অপুষ্টিজনিত অবস্থায় রয়েছে।”
বিবিসি জানিয়েছে, গাজার উত্তরাংশে তিন লাখ মানুষ সামান্য খাবার ও পরিষ্কার পানি নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক বলেছেন, “আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলাম তাই ঘটছে, অপুষ্টি গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে।”
জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখণ্ডের ৮৫% বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৬০% অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। এছাড়াও খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানান, গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এবং এটি হবে মানবসৃষ্ট। ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
মার্কিন ও ইসরায়েলি সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে ২৩০টি কার্গো-বিমান ও ত্রিশটি জাহাজ বোঝাই করে অস্ত্র পাঠিয়েছে।
গাজায় চলমান আগ্রাসনের মধ্যেই গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনসুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় দুই ইরানি জেনারেলসহ অন্তত সাতজন নিহত হন।
এর প্রতিশোধমূলক হামলা হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এরপর থেকেই ইসরায়েলের পাল্টা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা এখনই ইরানে হামলার পক্ষে নয়। তারা ইরানকে অন্যভাবে চাপে রেখে ইসরায়েলকে সংযত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তবে এরমধ্যেই ১৯ এপ্রিলের খবর, ইরানের মধ্যাঞ্চলের নগরী ইস্পাহানের বিমানঘাঁটির কাছে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ ও সিবিএসে ইরানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর প্রচারিত হলেও ইরান বলছে, এ ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
তবে ইস্পাহানের আকাশে যে তিনটি ড্রোন ইরান ধ্বংস করেছে সেগুলো ইসরায়েলই পাঠিয়েছিল কি-না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com