শিরোনাম
কোন অপচেষ্টা করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না তারেক রহমানের সঙ্গে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাতের সাক্ষাৎ, চাইলেন নগর সরকার ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে ডা. শাহাদাত হোসেন স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন Save the nature of Bangladesh চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কমিটির পক্ষ থেকে মেয়র কে ফুলেল শুভেচ্ছা বিশ্ব অ্যানাস্থেসিয়া দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামে সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যৌথ উদ্যোগই পারে সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখতে: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সব ধর্মের মানুষের জন্য শান্তির শহর গড়তে চাই — মেয়র ডা. শাহাদাত ভেজাল বিরোধী অভিযান সদরঘাট রোডে দুই রেস্টুরেন্টকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা

মালয়েশিয়ায় লেবার সোর্স কান্ট্রির সুবিধা নিতে পারছে না বাংলাদেশি শ্রমিকরা

Reporter Name / ২২৮ Time View
Update : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪

মালয়েশিয়া ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করলেও ২০১৫ সালে লেবার সোর্স দেশের মর্যাদা পায়। ততোদিনে বাংলাদেশের কর্মীর সংখ্যা বেশ বেড়ে যায় পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে ১৫ লাখের মত বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় আছে।

এসবের মধ্যে সব থেকে লোভনীয় হলো শ্রমিক বা কর্মী। এসব কর্মীদের ঘিরেই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে নানান চক্র ও অপকর্ম। এসব চক্রের কারণে শুধু বাংলাদেশের শ্রম বাজারের ক্ষতি হয়েছে এমন না মালয়েশিয়ার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে এবং এখনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে। সাধারণত উভয় দেশের কপালে জুটেছে মানব পাচার, শ্রম শোষণ, হয়রানি, প্রতারণা আর জোর জবরদস্তি শ্রমের অভিযোগ। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও যৌক্তিক অভিবাসন করার আন্তর্জাতিক ম্যান্ডেটে স্বাক্ষর করলেও সে সব লক্ষ অর্জন না করার অভিযোগ বেশ পুরোনো।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে লাইসেন্স প্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সি থাকলেও এদের ও নিয়োগকর্তার মাঝখানে অবৈধ কিছু ব্যক্তি আছে যাদের দালাল বাটপার বা মিডল ম্যান বলা হয় তাদের চক্রে পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ায় সাধারণত কর্মীদের আটক রাখা,পাসপোর্ট আটক রাখা, অবৈধ করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া, আবার ছড়িয়ে আনা, কোম্পানি থেকে ফুসলিয়ে লোভ দেখিয়ে পালিয়ে নেওয়া এবং অবৈধ করে বৈধতার নামে অর্থ নেওয়া, পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার নামে অর্থ নেওয়া ঘটনা যেন ডালভাত।

তাছাড়াও নকল কাগজ পত্র করে চাহিদার অতিরিক্ত কর্মী বাংলাদেশ থেকে এনে মালয়েশিয়ায় ডাম্পিং করার ঘটনা ঘটেছে বারবার। সর্বশেষ ২০০৬/০৭ সালে অতিরিক্ত কর্মী এনে মালয়েশিয়ায় মানবিক বিপর্যয় করা হয়েছে। ২০২৩/২৪ সালেও যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ফলে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এতে বাংলাদেশেরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর আগে আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে ব্যাপক অনিয়ম, শ্রম শোষণ, আটকে রাখা, বেতন ঠিকমত না দেওয়া, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না দেওয়া এবং নিয়োগকর্তাকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বাজে ঘটনার কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে আউট সোর্সিং নিষিদ্ধ করে।

নিত্য নতুন এসব দালালি ডোজে দিশেহারা হয়ে ভুক্তভুগি শ্রমিকরা বলছে, নতুন পুরাতন কর্মীরা কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে। নানা রকম পাঙ্কাট ওয়ালা উচ্চ পদবির দাতো, দাতোশ্রী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের সাথে যোগসাজশে ব্যাকআপের পরিচয় আর ভয়ভীতিতে সাধারণ কর্মীরা বাধ্য হচ্ছে এ চক্রের কথামতো চলতে। বৈধ হওয়ার আশায় অনেকেই তাদের প্ররোচনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বৈধতা না পেয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে তারা। পরে এসব টাকা চাইতে গেলেই উল্টো পুলিশ দিয়ে অথবা লোকাল গ্যাংস্টার দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে তাদের।

এদের দৌরাত্ম হয়েছে বন্ড সিরিজের মতো। হয়রানি ও কিডন্যাপ থেকে শুরু করে মার্ডার করতেও পিছপা হয না তারা। দ্বিধা করছে না, নারী ব্যবসা থেকে শুরু করে চাইল্ড পর্নোগ্রাফিরমতো বিকৃত রুচির কালোবাজারিতেও জড়াতে।

এসব দালালদের তথ্য উপাত্ত্ব ঘেটে জানা গেছে, এরা বাংলাদেশেরই মানুষ! এরাও একদিন সাধারণ শ্রমিক বেশে মালয়েশিয়ায় এসেছে। দীর্ঘদিন মলেয়শিয়াতে বসবাস করার ফলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে, এমনকি পুলিশের সঙ্গে এবং বিদেশী মদদ পুষ্ট এনজিওদের সাথে অনৈতিক সোর্স হিসেবে গড়ে উঠেছে তারা। ফলে তাদের সাথেই যোগসাজশে দেশি-বিদেশি চক্রের ক্রীড়ানকে পরিণত করছে মলেয়শিয়ার বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

এদের মধ্যে এমন আট জন ভিক্টিমের তথ্য উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে মো: আব্দুল আলিম, মো. আল-আমিন, মো. রানা, মো. কেসমত আলী, মো. রাকিব উল্লাহ, মো. শফিকুল ইসলাম ও মো. ইব্রাহীম। যারা এই প্রতারক চক্রের প্ররোচনায় তাদের নিজের কোম্পানির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াতে পুলিশ রিপোর্ট করে। অথচ সরেজমিনে তাদের নথি পত্র ঘেটে জানা গেছে, কোম্পানি তাদের কাজ দিয়েছে এবং সেই কোম্পানি বেসিক বেতনের পাশাপাশি ওভার টাইমও দিয়েছে যার পরিমাণ দৈনিক তিন থেকে চার ঘণ্টা প্রায়। পরে কোম্পানি ও শ্রমিকদের মুখোমুখি বসিয়ে তাদের দেওয়া বেতনের এসব নথিপত্র দেখানো হলে, তারা তাদের ভুল বুজতে পেরে কোম্পানির নামে করা পুলিশ রিপোর্ট তুলে নিয়েছে।

সরেজমিনে ভিকটিম এ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানির এ কর্মীদের সকল রকম সুবিধা দিতে কোম্পানিটি তৎপর। এদের মধ্যে এক শ্রমিক জানিয়েছে, আমাদের বস বলেছে, তোমাদের কেও যদি কাজ না পেয়ে থাকে বা কাজের সুরাত নিয়ে অন্য যায়গায় কাজ করছে এমন কেউ থাকলে তাদের চলে আসতে বলো।

কর্মীরা বলেন, আবু সাইদ আমাকে বলেছে, তোমাকে কোম্পানি পরিবর্তন করে দেব অন্য যায়গায় থাকলে টাকা পাবে। আমরা মালাক্কাতে ছিলাম। যাতায়াতের জন্য ৬০০ রিঙ্গিত প্রদান করে। আমরা যে জেটিকেতে আসতেছি যেটা আমাদের জানানো হয়নি, আমরা জানতাম কুয়ালালামপুর চৌকিটে আসছি। যখন টিবিএসে আসলাম তখন লোকেশন দিলো, আমরা চিনিনা। আইসা দেখি এটা জেটিকে। তখন আমাদের একটা পেপারে সাইন নিয়েছে। তারা বলেছে আমরা যদি মামালায় জয়ী হই তাহলে তোমরা টাকা পয়সা পাবে। তবে কে টাকা দিবে সেটা নির্দষ্ট করে বলেনি।

এদিকে আবু সাইদ তাদের ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনারা যদি এই কথা কোথাও শেয়ার করেন তাহলে আপনারা সমস্যায় পড়বেন। আপনাদের কোন ব্যাকআপ নেই। আমি কিন্তু ব্যাকআপ নিয়ে চলি।

এসব অনিয়মের এবং প্রবঞ্চনার শুরু কিছুটা বাংলাদেশ থেকেই শুরু হয়। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের প্রান্তে রিক্রুটমেন্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সির উপর নির্ভর করে। এই এজেন্সি নির্ভর করে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা অধরা দালালদের উপর। তখনই কাজ ও বেতন সম্পর্কে যেসব লোভনীয় কথা শোনানো হয় সে সবই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় এবং মালয়েশিয়ায় আসার পর কর্মীরা নিজেদের কোন দালালের খপ্পরে আবিষ্কার করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের দালাল ও মালয়েশিয়ায় দালালের মধ্যে যোগাযোগ মানে কেনা বেচা আছে। মানুষটি যেন পণ্য হয় সরকারি সব ব্যবস্থার মধ্যেই!

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে কোম্পানি বা কোম্পানির এজেন্টের কাছ থেকে ভিসা কিনে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চালু রয়েছে। এর করুন অবস্থা দেখা গেছে জি টু জি প্লাসের সময় তখন ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমতি থাকলেও বাস্তবে আগেই বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির ভিসা কিনে নেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে। তখন আগেই কোম্পানির থেকে ভিসা কিনে রাখা রিক্রুটিং এজেন্সি বাধ্য হয়ে নির্ধারিত দশটি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়েছে। ফলে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ভিসা কিনে নেওয়া এজেন্সিগুলো বেশ সোচ্চার হয় এমন কি উচ্চাদালোতে মামলাও করে।

দীর্ঘদিনের প্রচলিত নিয়ম ও অনিয়ম যেন বাংলাদেশের কাংখিত লক্ষ্য অর্জনে বাঁধা হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম ও অনিয়ম দুটোই সরকারি আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠে। তাই সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এক সময় মালয়েশিয়া বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের কর্মী নেওয়ার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু দালালরা এসব জেনে বুঝেই যে কোন উপায়ে দ্রুত অর্থ আয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে আর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/