শিরোনাম
ত্রিশালে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই শতাধিক পেঁপে গাছ নিধনের অভিযোগ দাগনভূঞায় সেতু আছে, সড়ক নেই। জনভোগান্তি চরমে বাগেরহাটে জমি দখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে নিয়ামতপুরে বিএনপির উঠান বৈঠক – দৈনিক গনমুক্তি দিনাজপুরে পুষ্টির সচেতনতামূলক বৃদ্ধিকরন নিয়ে কর্মশালা শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ১৫ বছর পর চালু হলো ৩ কেবিন  পাথরঘাটায় প্রবাসী স্ত্রীকে মারধর করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট, ১৮ লাখ চাঁদা দাবি  নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ মামলার বাদীকে ভয়ভীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন নাটোরে জুঁই হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম, দিল বৈষম্যছাত্র বিরোধী আন্দোলন

রাজত্ব পুনরুদ্ধার রিয়াল মাদ্রিদের

স্পোর্টস ডেস্ক / ২২১ Time View
Update : রবিবার, ২ জুন, ২০২৪

কোথা থেকে শুরু করা যায়? কাকে নিয়ে বলা যায়? বলার আছে অনেক কিছু, কিন্তু সব কিছু কি আর ভাষায় প্রকাশ করা যায়! দমকা বাতাস কিংবা বৃষ্টি শেষে সোনা রাঙা রোদকে কি আর ভাষায় প্রকাশ করা যায়? যায় না। একইভাবে রিয়াল মাদ্রিদের ১৫তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের মাহাত্ম্যকেও ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না, কেবল বুঝে নিতে হয়। ভাষায় প্রকাশযোগ্য প্রায় সব বিশেষণই যে অনেক আগেই বলা হয়ে গেছে।

যেমন বলা হয়ে গেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের প্রতিষ্ঠা করা রূপকথার রাজ্যের গল্পও। কিন্তু তবুও বলতে হবে, প্রায় মৃত অবস্থা থেকে একটি দলের জেগে ওঠার কথা। একজন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের আরও একবার বড় মঞ্চে নায়ক হয়ে ওঠার গল্প। ৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে দানি কারাভাহালের গোল করার মুহূর্তটিকেইবা এড়াবেন কীভাবে!

কিংবা ছয়টি ইউরোপ সেরার শিরোপা জেতা চার রিয়াল তারকাকেই ভুলবেন কীভাবে! নিজের বিদায়টাকে সোনায় মুড়িয়ে নেওয়া টনি ক্রুসের গল্পটাও তো ইতিহাস হয়ে গেল! আর সব শেষে বলতে হবে একজন ডন কার্লো আনচেলত্তির অমরত্ব লাভের কথাও। ওয়েম্বলিতে আজ রাতে তৈরি হওয়া এই রূপকথার গল্পের মূল কথা: ইউরোপিয়ান ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদই শেষ কথা। আর তাদের এই রাজত্বও চিরন্তন।

লন্ডনে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা ম্যাচের শুরুটা রিয়ালের জন্য ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। প্রথমার্ধে নিজেদের খুঁজেই পায়নি তারা। তবে যারা রিয়াল মাদ্রিদকে হৃদয় দিয়ে চেনেন, তারা নিশ্চয় এত বিচলিত হননি। এগুলো যে আনচেলত্তির তৈরি করা চিত্রনাট্যের অংশ নয়, সেটাইবা কে বলতে পারে। সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর পর গুরু আরিগো সাচ্চিকে আনচেলত্তি বলেছিলেন, ‘আরিগো, সেটা ছিল একধরনের কৌশল। আমরা মরে যাওয়ার ভান করেছিলাম এবং আকস্মিকভাবে শেষ মুহূর্তে ম্যাচে ফিরে আসি এবং জিতে যাই।’

আজ প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছিল, রিয়াল সমর্থকদের নিশ্চয় বারবার মনে পড়ছিল এই কথাগুলো। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে হলোও তাই। বিরতির পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটি। ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতটা বিদায়ী ম্যাচে ক্রুসই প্রথম দিয়েছিলেন। বিরতির পরপর তাঁর ফ্রি-কিক ঠেকান ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক। আর এরপরই দেখা মিলতে শুরু করে আসল রিয়াল মাদ্রিদের। ক্রুসের কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে গোল করে রিয়ালকে লিড এনে দেন ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলা দানি কারভাহাল।

এই গোলের পর রিয়ালের আত্মবিশ্বাস শিখর স্পর্শ করে। আর এরপরই আবির্ভাব বড় মঞ্চের নায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডের তৈরি করা ‘ক্রিসমাস ট্রি’ ফরমেশনের কারণে কিছুটা নিরব হয়ে থাকা ভিনি অবশ্য আগল ভেঙেছিলেন আরও আগে। উইং ধরে ম্যাটস ‍হামেলস এবং ইউলিয়ান রেয়ারসনের তৈরি করা ব্লক বারবার ভেঙেছেন। যদিও শেষ শটটি নেওয়া হচ্ছিল না তাঁর। অবশেষে ডর্টমুন্ড নিজেরা ভুল করেই সুযোগ করে দেয় ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে। দারুণ ফিনিশিংয়ে ডর্টমুন্ডে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন ও মার্কো রয়েসের বিদায়কে বিষাদে রাঙিয়ে দেন ভিনি।

রিয়ালের হয়ে অনবদ্য এ পারফরম্যান্সের জবাবটা শেষ মুহূর্তে বদলি হিসেবে নামার সময়ই পেয়ে যান ভিনি। রিয়াল সমর্থকরা অভিবাদন জানান তাঁকে। এমনকি ম্যাচ শেষে সমর্থকদের মাঝে গিয়ে তাঁদের উদ্‌যাপনেও যোগ দেন ভিনি। তাঁর জন্য এমন ‍মুহূর্ত অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২২ সালে রিয়াল ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ে লিভারপুলের বিপক্ষে জয়সূচক একমাত্র গোলটি এসেছিল ভিনির কাছ থেকেই। এবারও রিয়ালের হয়ে টানা দ্বিতীয় ফাইনালে গোল করলেন তারুণ্যে ভরপুর এ উইঙ্গার।

ম্যাচটি বিশেষ ছিল রিয়ালের চার তারকা টনি ক্রুস, লুকা মদরিচ, দানি কারভাহাল এবং নাচোর জন্যও। ইউরোপিয়ান সেরার ট্রফিটি সবচেয়ে বেশিবার জেতায় রিয়াল কিংবদন্তি পাকো হেন্তোকে ছুঁয়েছেন তাঁরা। এর আগে ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমের মধ্যে ৬ বার ইউরোপ সেরা হয়েছিলেন হেন্তো। আজ শিরোপা জিতে সেই ক্লাবে যোগ দিয়েছেন এ চারজন।

এই ফাইনালটা বিশেষ ছিল ক্রুসের জন্যও। এই ম্যাচ দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ এবং ক্লাব ফুটবলকে বিদায় জানালেন এ জার্মান স্নাইপার। বিদায় বেলাতেও নিজের গুরুত্বটা ঠিকই বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। প্রথমার্ধে রিয়ালে সংগ্রাম করার মূল কারণ ছিল ক্রুসের ছন্দে না থাকা। আর দ্বিতীয়ার্ধে ক্রুস স্বরূপে ফিরতেই অ্যাটাকিং থার্ডে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে ‍শুরু করে রিয়াল। সামনের দিনগুলোতেও নিশ্চিতভাবেই ক্রুসের অভাবটা আরও বেশি বোধ করবে রিয়াল। ক্রুসের বিপরীতের মার্কো রয়েসের হতাশার কথাও বলে রাখা উচিত। ডর্টমুন্ডের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচটা আজ খেলে ফেললেন রয়েস। কিন্তু শেষটাও হলো শিরোপাহীন ও হতাশার। ফুটবলের ওপর ঋণের বোঝাটা আরেকটু ভারি করেই হলুদ-কালো শিবিরকে বিদায় জানালেন রয়েস।

এই ম্যাচ দিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বাদ পেলেন জুড বেলিংহাম। রিয়ালের বেলিংহামের প্রথম মৌসুমটা শেষ হলো দুর্দান্তভাবে। ফাইনালে অবশ্য নিজের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি বেলিংহাম। তাতে অবশ্য বিশেষ ক্ষতি হয়নি। চেনা পরিবেশে উৎসবে মেতেই মাঠ ছেড়েছেন এ মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত বেলিংহাম বলেছেন, ‘আমি এই ম্যাচটি সব সময় স্বপ্নে দেখেছি। আমার ভাই এখানে উপস্থিত আছে এবং আমি সব সময় তার আদর্শ হওয়ার চেষ্টা করি। আমি অনুভূতি ভাষায় বোঝাতে পারব না। এটা আমার জীবনের সেরা রাত।’

ম্যাচটা কি থিবো কোর্তোয়ার জন্যও নিজেকে প্রমাণের ছিল না! পুরো মৌসুমটা যাঁর কেটেছে চোটে। জায়গা হয়নি বেলজিয়ামের ইউরোর স্কোয়াডেও। তাঁর পরিবর্তে মৌসুমজুড়ে গোলকিপিং করা আন্দ্রেই লুনিনের আজ খেলার কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু পরীক্ষিত অস্ত্রের ওপরই শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখেন আনচেলত্তি। আর প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ড যখন আক্রমণের রায়ট চালাচ্ছিল, তখন পোস্ট আগলে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই কোর্তোয়াই।

সব শেষে বলতে হয় আনচেলত্তির কথা! শিরোপা জয়ের পর রিয়াল খেলোয়াড়েরা যখন তাঁকে শূণ্যে ছুড়ে আবার লুফে নিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি আকাশে ভেসে যাবেন! বাস্তবে মহাকর্ষ বলকে হারাতে না পারলেও, ডাগআউটে দাঁড়িয়ে পেছনে ফেলেছেন সব অতীত রেকর্ডকে। যা স্বাভাবিকভাবেই তিনি করেছেন অবয়ব ও অভিব্যক্তিতে বিশেষ কোন পরিবর্তন ছাড়াই। ওয়েম্বলিতে আজ রাতে সেই চিরচেনা দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হলো আরেকবার! মুখে চুইংগাম রেখে চোয়াল নাচাতে নাচাতে রিয়ালকে ‘ডন কার্লো’ এনে দিলেন ১৫ তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। আর সেই সঙ্গে নিজেকে নিয়ে গেলেন বাকিদের ধরাছোঁয়া থেকে অনেক দূরেও।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/