শিশুকে খাওয়ানোর সঠিক সময় ও নিয়ম

অনলাইন ডেস্ক / ২২৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪

শিশুর খাবার নিয়ে মা-বাবার ভাবনার শেষ নেই। শিশুকে কোন বয়সে কোন খাবার দিতে হবে, তা নিয়ে ধারণা থাকা জরুরি। শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই একমাত্র ও আদর্শ খাবার। এসময় অন্য কোনো খাবার এমনকি পানি পান করানোরও কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

ছয় মাস পর থেকে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে তথা স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো দরকার। তবে শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত দুধ হিসাবে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানোর দরকার নেই। মায়ের দুধে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই থাকে।

এ ছাড়া জন্মের পরপরই মায়ের স্তন থেকে যে হলুদ রঙের শালদুধ নিঃসরণ হয়, তা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে এ শালদুধ খাওয়ানো নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। কিন্তু এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, শালদুধই শিশুর জন্য প্রথম প্রতিরক্ষা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিন-চার বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের অতিরিক্ত তেল ও মসলামুক্ত স্বাভাবিক সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের বৃদ্ধির বয়স এটি। তাই খাবারে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও ডাল রাখা উচিত। ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের খাবারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

এ বয়সী শিশুদের নরম ও তরল খাবার বেশি খাওয়ানো প্রয়োজন। তাদের শরীর ঠাণ্ডা ও হাইড্রেটেট থাকে এ সময় এমন ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন—গরম পানি, চাল ও মুগ ডালের নরম মিশ্রণ; ছোট এলাচ ও ডালিয়ার নরম মিশ্রণ; গরম দুধ, ওটস ও মধুর মিশ্রণ; ভুট্টা, মুগ ও তিল পাউডারের মিশ্রণ; সয়াবিন ও গমের মিশ্রণ; আপেল ও গরম পানিতে রান্না করা আটার মিশ্রণ; চীনা বাদাম ও গমের মিশ্রণ ইত্যাদি। বড় শিশুদের জন্য নাশতা হিসেবে বাসায় বানানো ডিমের পুডিং, ডাবের পানির পুডিং, সবজির রোল, সবজির স্যান্ডউইচ, চিকেন মোমো, দুধ দিয়ে পাউরুটি ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন।

তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি সব শিশুকেই বেশি বেশি পানি, লেবুর শরবত, বাসায় বানানো বিভিন্ন ফলের শরবত, মৌসুমি ফল যেমন আম, তরমুজ, পেয়ারা, বেল ইত্যাদি ফল খাওয়াতে হবে। ছয় মাস পর্যন্ত নবজাতকরা মায়ের দুধ পান করে। এ ক্ষেত্রে মায়ের বেশি বেশি পানি, লেবুর শরবত, বাসায় বানানো বিভিন্ন ফলের শরবত, মৌসুমি ফল ও স্বাভাবিক খাবারের মধ্যে তরল খাবার খেতে হবে। যেমন—ডাল, আমডাল, ঝোল তরকারি ইত্যাদি।

এতে তাঁর শরীর হাইড্রেটেট থাকবে। ফলে নবজাতক শিশু ঠিকমতো দুধ পাবে।

শিশুদের সদ্য তৈরি খাবার ও তাজা ফল খাওয়াতে হবে। গরমে কোনো অবস্থায়ই শিশুদের বাইরের খোলা খাবার, যেমন ঝালমুড়ি, ফুচকা, বাইরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাটা ফল, রাস্তার পাশে বানানো শরবত খাওয়ানো যাবে না। এতে বিভিন্ন অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পাশাপাশি এই গরমে শিশুদের অতিরিক্ত চিনি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

খাওয়ানোর সময়
তিন থেকে চার বছর বয়সের ঊর্ধ্ব শিশুদের তিন বেলা স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি সকালে ও বিকেলে দুবেলা নাশতা খাওয়াতে হবে। ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক দুই থেকে তিনবার খাবার খাওয়াতে হবে। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই নবজাতক ব্যতীত সব শিশুকেই কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করাতে হবে। দিনে অন্তত এক থেকে দুবার লেবুর শরবত বা ফলের শরবত খাওয়াতে হবে। নবজাতক শিশুদের কিছুক্ষণ পর পর মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। এতে নবজাতকের পানিশূন্যতার আশঙ্কা থাকবে না।

খাওয়ানোর নিয়ম
শিশুদের কোনো অবস্থায়ই অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়ানো যাবে না। সদ্য ফ্রিজ থেকে বের করা খাবারও খাওয়ানো যাবে না। ছয় মাস থেকে দু-এক বছর বয়সী শিশুদের প্রতিবার ২.৫ মিলি বা আধা বাটি খাবার খাওয়াতে হবে। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার খাবার খাওয়াতে হবে। ধীরে ধীরে খাবার খাওয়াতে হবে।

অসুস্থ হলে করণীয়
গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শিশুরা পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে তদের সদ্য রান্না করা অতিরিক্ত তেল-মসলামুক্ত খাবার, সদ্য ধোয়া ফল খাওয়াতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে যিনি খাওয়াবেন তাঁর এবং শিশুর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। শিশু ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে তরল খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। অসুখ কোনোভাবে ভালো না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এ ছাড়া শিশুর জিহ্বা শুকিয়ে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, শিশু অস্বস্তি বোধ করলে, বমি বমি ভাব হলে, মাথা ঘুরালে তা ডিহাইড্রেট বলে বিবেচনা করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/