ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু, প্রথম দিনই শিডিউল বিপর্যয়

অনলাইন ডেস্ক / ২৭৫ Time View
Update : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪

শুরু হলো ট্রেনে ঈদযাত্রা। প্রথম দিনেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে রাজধানীর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল ট্রেন৷ সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে এ যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও গন্তব্যের উদ্দেশে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সাড়ে আটটায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নারীর টানে বাড়ি ফেরা হাজার হাজার যাত্রী।

আজ বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে আটটা কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মূলত ঈদ যাত্রার প্রথম দিনে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে এমন ভিড় জমেছে স্টেশনে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ভোগান্তির কথা জানা গেছে। অন্যদিকে ট্রেনের রেকগুলোতে কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯) ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। দিনের দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯) সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়।

এ অবস্থায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের শিডিউলে বিলম্বের প্রভাব পড়েছে অন্য ট্রেনগুলোতে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গরমের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম ভর্তি মানুষ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য।

আরও দেখা গেছে, গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনো টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় অবাঞ্ছিত কোনো মানুষকে দেখা যায়নি।

ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এজন্য প্লাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে। প্লাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে যাত্রীদের টিকিট চেক করতে, তবে এনআইডি মিলিয়ে দেখতে দেখা যায়নি এবার। যাদের টিকিট নেই, তারা ১-৬ নাম্বার কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারপর যাত্রীরা পরিচ্ছন্ন একটি পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন।

স্টেশন এলাকায় ঢুকতেই দেখা গেছে, যাত্রীদের জটলা। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেন বিলম্ব থাকায় তারা প্ল্যাটফর্মে বসে ও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কম্পিউটার (৪৩) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখন পর্যন্ত কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কম্পিউটার (৪) ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখন পর্যন্ত কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৪০ মিনিট বিলম্বে ট্রেনটি ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। ঈদ স্পেশাল ট্রেন ‘দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল’ সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি ১ ঘণ্টা বিলম্বে ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ে। জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্রেনটি কোনো প্লাটফর্ম পায়নি। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল ছিল। তবে ২৫ মিনিট বিলম্বে ১০টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়।

কিশোরগঞ্জগামী এগার সিন্দুর ট্রেনের যাত্রী আব্দুল বাছেদ বলেন, আমি ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে এসেছি। ৭টা ১৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা, সোয়া ৯টা বেজে গেলো ট্রেন ছাড়ছে না। কিছু বলছেও না কখন ছাড়বে। ঠিক সময়ে ছাড়লে আমি এতক্ষণে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে যেতাম। ট্রেনটি পরে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়।

রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, আমার গন্তব্য কুড়িগ্রাম, সাড়ে ৮টায় এসেছি। ট্রেন ছাড়ার কথা ৯টা ১০ মিনিটে, এখন পৌনে ১০টা বাজে, কিন্তু ট্রেন ছাড়েনি। ট্রেনের এরকম লেট আর নতুন কিছু না। রোজার ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় টাইম মতো যেতে পারলেও ঢাকায় ফেরার সময় প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে ট্রেন ছাড়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঈদযাত্রার প্রথম দিন হিসাবে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শুরুর দিকের দুটি ট্রেনের রেকে কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় সেগুলো সংশোধন করতে আরও ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। ফলে এই ট্রেনগুলোর বিলম্বের জের অন্য ট্রেনগুলোতেও টানতে হচ্ছে। ফলে ২০/৩০ মিনিট দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং ওয়াটারিং করা হয়। এজন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনগুলো ১০-২০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/