ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র মুসলিম রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং হিজবুল্লাহ (আইডিএফ)— উভয়ই পৃথক বিবৃতিতে আকিলের নিহতের সত্যতা স্বীকার করেছে।
আকিল হিজবুল্লাহর এলিট ফোর্স রাদওয়ান ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া ১৯৮৩ সালে বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ‘গালিলে বিজয়’ নামের ওই হামলা মার্কিন ও লেবানিজ নাগরিকসহ নিহত হয়েছিলেন মোট ৬৩ জন। ২০১৯ সালে তার মাথার দাম ৭০ লাখ ডলার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিবৃতিতে এ দু’টি বিষয় উল্লেখ করে আইডিএফ বলেছে, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান বাহিনী বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। এতে হিজবুল্লাহর এলিট ফোর্স রাদওয়ান ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার এবং ‘গালিলে বিজয়’ হামলার অন্যতম সদস্য ইব্রাহিম আকিল নিহত হয়েছে।”
নিজেদের বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, “গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় বৈরুদের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলী এলাকা দাহিয়েহতে হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল নিহত হয়েছেন।”
হামলায় ইব্রাহিম আকিল ব্যতীত বাকি ১৩ জন নিহতের সংবাদ জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিজেদের বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “শুক্রবার রাতে দাহিয়েহতে বিমান হামলায় (ইব্রাহিম আকিলসহ) মোট ১৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৬৬ জন। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ধ্বংস্তূপের তলায় অনেকে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
মাত্র দু’দিন আগে পেজার বিস্ফোরণে লেবাননে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে লেবানন এবং হিজবুল্লাহ। ইসরায়েল এই স্বীকার করেনি, আবার প্রত্যাখ্যানও করেনি। ভয়াবহ সেই হামলার রেশ না কাটতেই এই বিমান হামলা চালালো আইডিএফ।
লেবাননের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রদর্শিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শনিবার সকালে দাহিয়ের হামলাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ সরাতে কাজ করছে স্থানীয় জনতাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে বেশ বেলা পর্যন্ত বৈরুতের আকাশে উড়েছে আইডিএফের ড্রোন।
১৮ বছর আগে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। কয়েক বছর দু’পক্ষের সংঘাতের পর পরিস্থিতি থিতিয়ে আসছিল অনেকটাই; কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত হামলা ফের ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহকে মুখোমুখী অবস্থানে নিয়ে আসে।
হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধারে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইসরায়েলও।
দাহিয়ের স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালেইন ফেঘালি রয়টার্সকে বলেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি না, তবে একটা কার্যকর সমাধান আমরা চাই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।”
হিজবুল্লাহর চোরাগুপ্তা হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৮ বছর আগে এই গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। কয়েক বছর দু’পক্ষের সংঘাতের পর পরিস্থিতি থিতিয়ে আসছিল অনেকটাই; কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত হামলা ফের ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহকে মুখোমুখী অবস্থানে নিয়ে আসে।
শুক্রবারের হামলার পর সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য যে পরিষ্কার, আর তা হলো ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com