বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট দিনটি আগামীতে ‘হাসিনার পালানো দিন’ হিসাবেই ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে আয়নাঘর, গুম, হত্যা, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মী পর্যন্ত নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যাকন্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে এক দুর্বিসহ জীবনের দিকে ঠেলে দেয়ার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে পাশ্ববর্তী দেশের মিডিয়ায় ভুড়ি ভুড়ি মিথ্যাচার তথ্য প্রচারে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামে। গণতন্ত্রের লেবাসধারী দেশটির মিডিয়া ছাড়াও নামে-বেনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালাতে থাকে। ভারতের এসব মিথ্যাচার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বিবিসি’র ফেক্টচেকের মাধ্যমে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সেই মিথ্যার ওপর বর করেই বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ জানায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে মোদির অভিযোগ আমলে নেয়নি।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখন ফের নতুন ফর্মূলায় অবদার ভারতের। ‘বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলাতে পারে’ ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এমন বক্তব্য কি কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত? একটি দেশে সরকার পরিবর্তন হলে সম্পর্ক বদলাতে পারে, ভারতীয় সেনাপ্রধান মি. দ্বিবেদী কি এমন মন্তব্য করতে পারেন? মি. দ্বিবেদীর এই বক্তব্য রোববার ভারতের মিডিয়া প্রচার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি ও চলমান সংঘাত থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশ পরিস্থিতি এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান মন্তব্য, যেহেতু আমি বলেছি যে সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু একটি নির্দিষ্ট দেশ, সে দেশ যদি আমার কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, আমার প্রধান উদ্বেগ হলো, সেই দেশের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের পথ ব্যবহার করা হতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান-চীন সম্পর্ককে কীভাবে দেখে এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, দুই দেশের মধ্যে উচ্চমাত্রার সহযোগিতা রয়েছে, যা আমাদের মেনে নেওয়া উচিত।
ভার্চুয়াল ক্ষেত্রে এটি প্রায় শতভাগ; আর বাস্তব ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম চীনের তৈরি। অতএব, সহযোগিতার এই পরিস্থিতি আমাদের সামনে বিদ্যমান। এর অর্থ আমার দৃষ্টিতে দ্বিমুখী হুমকির বাস্তবতা। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় ভারত। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো সঙ্গে ভারত সবর্দা সুসম্পর্ক রক্ষা করতে চায় বলেও মন্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। গত শনিবার দেশটির বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশীয় নিউজ সার্ভিসকে (আইএএনএস) দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে রাজনাথ সিং বলেন, ভারত সবসময় তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং বাংলাদেশের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা সবসময় আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি, কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী বলতেন যে, আমরা বন্ধু পরিবর্তন করতে পারি কিন্তু প্রতিবেশী নয়। তাই, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। তখন থেকেই শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও তাকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হতে থাকে। বাংলাদেশ বিষয়ে ভুরি ভুরি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে থাকে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। এরইমধ্যে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার দেখা দেয়। যদিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই, তা কেবল ভুল বোঝাবুঝি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, আমরা স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশ সমর্থন করি; যেখানে সব সমস্যার সমাধান গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
https://slotbet.online/