ওমরাহ ভিসা সংকটে বিপাকে যাত্রীরা

Reporter Name / ৫৩ Time View
Update : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

বাতিল হচ্ছে শত শত টিকিট

রমজান মাসে ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি নেয়া হাজারো যাত্রী এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। ভিসা সংকটের কারণে শত শত টিকিট বাতিল হয়েছে, এমনকি যাত্রী সংকটে কিছু ফ্লাইটও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক ওমরাহ এজেন্সির মালিক জানান, ‘সব ব্যবস্থা সম্পন্ন, টিকিট কাটা, হোটেল বুকিংও শেষ, কিন্তু ভিসাই পাচ্ছি না। এতে আমরা বড় সমস্যায় পড়েছি।’ হজ এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে প্রায় দুই হাজার যাত্রীর আসন বাতিল করা হয়েছে। এতে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ৭০ শতাংশ সিট ফাঁকা থাকছে। কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল মদিনা ট্রাভেলস, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও সাদিয়া এয়ারের শত শত টিকিট ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ‘বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের ভিসা কমিয়ে দেয়ার বিষয়টি জানতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, ৪ মার্চ থেকে সৌদি আরবের নুসুক সিস্টেমে (হজ ও ওমরাহের ধর্মীয় কাজের নিয়ম) ওমরাহ ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। ৯০ শতাংশ ভিসা কমিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের কোটা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। রমজান মাসে মক্কা-মদিনায় ইবাদতের পরিকল্পনা করা যাত্রীরা এতে দারুণ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। পাসপোর্ট জমা দিলেই দেখা যাচ্ছে, কোটার সীমা শেষ হয়ে গেছে।

সৌদি আরবে কর্মরত ওমরাহ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতি বছর রমজানের শুরুতেই ওমরাহ যাত্রীদের চাপ সামলাতে কোটা নির্ধারণ করা হয়। অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ওমরাহ ভিসায় সৌদি যান, এতে ভিসার চাহিদা আরও বেড়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, ‘এবারের হজ প্রস্তুতি আগেভাগেই শুরু হওয়ায় শাওয়ালের ২০ তারিখের মধ্যে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি ছাড়তে বলা হয়েছে। অনেকে ওমরাহ ভিসায় এসে হজ পালনের চেষ্টা করেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

সৌদি সংবাদমাধ্যম এসপিএ জানিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। পবিত্র স্থানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ধারাবাহিক বিনিয়োগের ফল হিসেবে এটি দেখছে সৌদি সরকার। ২০২৩ সালে ১ কোটি ৩৫ লাখ ওমরাহযাত্রীর রেকর্ডের পর, ২০২৫ সালের ৬ মার্চ একদিনে ৫ লাখ ওমরাহযাত্রীর নতুন রেকর্ড গড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি ওমরাহ পালন করেছেন। ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী প্রবেশ করায় সৌদি সরকার মোফা অনুমোদন কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করছে, যাতে দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়।

এদিকে, ভিসা সংকটের সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘২৪ ঘণ্টায় নিশ্চিত ভিসা’ দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সহ-সভাপতি নূর মোহাম্মদ সতর্ক করে বলেন, ‘কেউ যদি বলে ২৪ ঘণ্টায় ভিসা পাওয়া যাবে, তাকে বিশ্বাস করবেন না।’
আলফু-জোনায়েদ হজ ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক জানান, তার ৩০ জন ওমরাহযাত্রীর জন্য ১৬ মার্চের টিকিট কাটা ছিল। বাড়িভাড়া, ভিসা ও বিমান ভাড়া বাবদ তিনি ইতোমধ্যে ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় যাত্রীরা টাকা ফেরত চাইছেন, অথচ বিমান সংস্থাগুলো টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এতে তিনি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

হাব মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার সৌদি সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতি রিফান্ড, রি-ইস্যু ও তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত, আমাদের হাতে কিছু নেই। তবে টিকিটের টাকা ফেরতের বিষয়ে সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বিষয়টি সৌদি সরকারের কাছে তুলে ধরব।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/