শিরোনাম

বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে মেয়ে বিসিএস ক্যাডার

Reporter Name / ১৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তুলেন প্রতারণা চক্র। বাবার একই নাম রাষ্ট্রীয় নথিতে আটভাবে লেখা কখনও পুলিশ, কখনও সেনাবাহিনীর কর্পোরাল

বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে কোটার সুযোগ নিয়ে ক্যাডার পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি এমন অভিযোগ দায়ের করেন। ৪০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট ১৩টি অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া জিন্নাতের পিতা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হলেও ওই কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তিনি। আর জিনিয়া জিন্নাতের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতেও সহায়তা করেছেন এই প্রতারক জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। অভিযুক্ত মিনহাজ উদ্দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরের আছাদ মিয়ার বাড়ির মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। আর পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত বরিশালের বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামের রত্তন আলী শরীফের মেয়ে। রত্তন আলী শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করলেও অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।
অভিযোগে বলা হয়, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, প্রতারণা, মানুষকে ভয় দেখিয়ে এবং নিরীহ ব্যক্তিদের মামলায় যুক্ত করাসহ অবৈধভাবে টাকা উপার্জন, পাচার ও হয়রানি করে আসছেন। অনুসন্ধান সাপেক্ষে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া জরুরি।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তির উত্থান মূলত ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা হয়ে ওঠে। নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান ব্যবসা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়াও হয়ে ওঠে তার পেশা। অপরাধ সম্পন্ন করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করায় সাহারা খাতুন নিজেই তাকে একবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
ওই ব্যক্তি নিজেকে ডক্টর দাবি করলেও তা ভুয়া। অপরাধের টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে তার এবং জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে। ৯৬টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায় আশরাফুজ্জামান মিনহাজের। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অ্যাকউন্টগুলো বন্ধ করে দেন তিনি। মিনহাজ উদ্দিন নামে এই প্রতারক অধিকাংশ সময়ে থাকেন বিভিন্ন সার্কিট হাউজে। বর্তমানে জিনিয়া জিন্নাত ও তাহমিনা আক্তার তিন্নি, এক নারী জজ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে জায়গা বুঝে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। তবে এসব নারীদের মধ্যে জিনিয়া জিন্নাতই কেবল ওই ব্যক্তিকে মিনহাজ উদ্দিন নামে তার স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেন টাঙ্গাইলের সহকারী কমিশনার ভূমি নাজমুল হাসানের কাছে। জিনিয়া জিন্নাত ও ওই ব্যক্তির একাধিক নামের পাশাপাশি একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। প্রভাবশালী নারী, সচিব, ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ ও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনে পেশা।
১৩টি অভিযোগের প্রথমটিতে বলা হয়, পিতা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও সেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কন্যা জিনিয়া জিন্নাত বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর বর্তমানে তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব। অনুসন্ধান সাপেক্ষে চাকরি থেকে অপরাসরণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জিনিয়া জিন্নাতের পিতা রত্তন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। শেখ হাসিনার দেওয়া বীর প্রতীক উপাধিতে তিনি করপোরাল ব্যবহার করেছেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি বিমানবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং অবসরে গেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে। আবার অন্য এক গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে রত্তন শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করেছেন অথবা নিজেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। আরও অভিযোগ আছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর তার কথিত স্বামীকে নিয়ে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তিনি।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, স্বামীর পরিচয় না থাকলেও অনৈতিক সম্পর্কে গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাবেক সহকারী কমিশনার ভূমি জিনিয়া জিন্নাত, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। জিনিয়া জিন্নাত টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সহকারী ভূমি কমিশনার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই শেষ করে দেওয়া ওই সন্তানের পিতা কে, নিশ্চিত হওয়া না গেলেও অতি গোপনে গর্ভের সন্তান হত্যার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জিনিয়া জিন্নাত।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাত নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামী নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। করতেন গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি। সহযোগিতা করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্ত্রী জিনিয়া জিন্নাত নিজেই।
নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী তার সরকারি গাড়ি ও গানম্যান ব্যবহার করে নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। পরিচালনা করতেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুটি গাড়ি জব্দ করেন দুলালপুর থেকে এবং সেগুলো আলাদা ড্রাইভার দিয়ে নিজের হেফাজতে নেন, বিষয়টি নিয়ে জিনিয়া জিন্নাতকে শোকজও করা হয়েছিল; ফলাফল শূন্য। এ ছাড়া সেই কথিত স্বামী বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন। চালকদের পাঠিয়ে গাড়িতে বসে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতেন তার কথিত স্বামী।
চার নম্বরে অভিযোগে বলা হয়েছে, বেতন দেওয়ার পরিবর্তে অপরাধ জায়েজ করতে মিথ্যা অভিযোগে চালককে বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাত তার কথিত স্বামীর কথায় পৌরসভার সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভারকে বেতন ভাতা না দিয়ে ডিউটিকালে তার কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিতেন। এখনও তার কাছে ওই চালক রোবেল মিয়ার চার লাখের বেশি টাকা পাওনা। কথিত স্বামী পরিচয় দেয়া ব্যক্তির অপরাধ জায়েজ করতে রোবেল মিয়াকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরিচ্যুত করেন জিনিয়া জিন্নাত। চাকরি ফিরে চাইতে গেলে চালককে ঘাড় ধরে বের করে দেন।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে সরকারি গাড়ি ও প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খরচ নিতেন চালক ইদ্রিসের কাছ থেকে। পরে বেতন না দিয়েই সেই চালককে অপসারণ করা হয়। জিনিয়া জিন্নাত নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে অফিস শেষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন। গাড়ির জ্বালানী এবং আনসার সদস্য ও তাদের যাবতীয় খরচ বহন করতে হতো চালককে। ওই চালককে নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী গিয়েছিলেন কথিত স্বামীর সাথে। কিন্তু শেষপর্যন্ত বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে বের করেন দেন সেই চালককে। চালক মো. ইদ্রিস আলীও প্রায় দুই লাখের ওপরে পাওনা।
ছয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সরকারি গাড়ি মেরামতের টাকা ও জ্বালানি খরচের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো চালককে মিথ্যা শোকজ দিয়ে সরকার চাকরি খেয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। এসবের পেছনে ছিলেন কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। নরসিংদীর শিবপুরে সরকারি গাড়ি মেরামতের খরচ না দিয়ে গাড়ির পার্টস ও ইঞ্জিন নাড়া-চাড়া করে চালক রোবেল গাড়ি নষ্ট করেছে এমনসহ নানা অভিযোগে শোকজ করেন জিনিয়া জিন্নাত। পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি নিয়ে তিনি তাতে সই করাতেন চালক রোবেলকে দিয়ে। পরে সেই টাকাও পরিশোধ না করে চালকের ওপর দোষ চাপান এবং মিথ্যা মামলারও হুমকি দেন। পরে শোকজের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি ফেরত, ক্ষতিপূরণ এবং জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামীর শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা।
সাত নম্বর অভিযোগে বলা হয়, কোরবানির কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি কথিত স্বামী ও জিনিয়া জিন্নাত। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে কোরবানীর দিয়ে কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী। চরম খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আট নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাতের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহিরাগত হয়েও তার স্বামী লোকজন নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির চেয়ারে বসে খাবার গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির ওই অফিসের সাবেক সহকারী কশিমনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী এ ঘটনা ঘটান।
নয় নম্বরে বলা হয়, স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট তাই স্ত্রীর সহায়তায় মামলা বাণিজ্য করেন কথিত স্বামী। নীরিহ মানুষের নাম মামলায় যুক্ত করে সেই মানুষকে মামলা থেকে বাঁচানোর নামে টাকা আদায় তার ব্যবসা। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বহু মানুষকে হয়রানি করছেন তারা। নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় অন্তত ১০ জনকে তিনি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। এমন কী নিজের পিতা হারুনুর রশিদকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও জিনিয়া জিন্নাত চক্র।
১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের জবাবসহ শাস্তি এড়াতে ডিসি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে নিজের বিরুদ্ধে শোকজের নথি সরিয়ে ফেলেছেন জিনিয়া জিন্নাত। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম ও সরকারি ফোন নিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ে যাওয়াও বিষয়ে শোকজ করলেও সব শোকজের নথি ও জবাব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১ জুন ২০২৩ তারিখে ভারতে সরকারি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শোকজ করা হয়। শোকজ থাকলেও জবাব সরিয়ে ফেলেছেন। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে তাকে এসব শোকজ করা হয়, যা প্রভাব খাটিয়ে সরিয়ে ফেলেন।
১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ দুজন এতটা ভয়ঙ্কার ও দুর্নীতিবাজ ছিলেন যে জিনিয়া জিন্নাতের বদলীর খবরে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে।
১২ নম্বর অভিযোগে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রিসার্চার বলে নিজেকে দাবি করেছেন। কিন্তু তারই দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, যেখানে তিনি রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে সেখানেই তিনি ছাত্র ছিলেন তিনি ২০১১ সাল থেকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী হওয়ার আগেই শিক্ষক সেজে বসে আছেন।
অন্যদিকে, জিনিয়া জিন্নাতের বাবা রত্তন আলী শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগে হয় তিনি নিজেকে যুদ্ধাহত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিতে নামের মিল নেই। তার ৯টি নামের রকম দেখা যায়, (১) জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, (২) লাল মুক্তি বার্তায় তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীর প্রতীক (বিমান), (৩) খেতাবপ্রাপ্ত গেজেটে (গেজেট নং-৫৪১) তার নাম রতন শরীফ পুলিশ, (৪) বিমান বাহিনী গেজেটে(গেজেট নং-৩৩৭) তার নাম ফ্লাঃ সাঃ রতন আলী শরীফ), (৫) বিমান বাহিনীর বীর প্রতীকের তালিকায় তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ পুলিশ, (৬) ১৯৭৩ এর গেজেটে (গেজেটে সিরিয়াল নং-২৯১) তার নাম রতন শরীফ (৭) বেসামরিক গেজেটে (গেজেট নং-১৩২১) তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ (বীরপ্রতীক), (৮) বীরত্বভূষণ সনদে (সনদ নং-২৯১) তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ, (৯) খেতাবপ্রাপ্ত আরেক তালিকায় তার নাম কর্পোরাল (অব:) রতন শরীফ হিসেবে তার নাম লেখা। অর্থাৎ একই ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রীয় নথিতে আটভাবে লেখা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তার পিতার নাম উল্লেখ নেই। এমন কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দাবী করা বীরত্বভূষণ সনদে তারিখও উল্লেখ নেই। নিজেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও চিকিৎসা সনদও পাওয়া যায়নি। এসব অসঙ্গতির পাশাপাশি অভিযোগ পাওয়া যায় ওই ব্যক্তি আসল রতন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা নয় এবং বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম ঠিকানা মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, পিতা নুর মোহাম্মদ শরীফ, মাতা কদভানু, গ্রাম রাকুদিয়া, ডাকঘর রাকুদিয়া, থানা বাবুগঞ্জ, জেলা বরিশাল। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া তার সব তথ্য যাচাই সাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল, রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধা ফেরত এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/