চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ভুগছে রোগীরা

Reporter Name / ৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫


ঈদের ছুটিতে সরকারী হাসপাতালের চালচিত্র


বিশেষ প্রতিনিধি

  • আপডেট সময় :
    ১১:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫




    ২২

    বার পড়া হয়েছে

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News)
ফিডটি

ঈদেও টানা ৯ দিন সরকারী ছুটিতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় সেবা পেতে ভোগান্তি পেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। ঈদেও সময়ে হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় এলার্জি শ্বাশকষ্ট ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। গত ৪৮ ঘন্টায় রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ৫টি সরকারী হাসপাতালের ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। পাশাপাশি রোগী অনবরত হাসপাতালে আসছে। ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা না থাকায় সেবা পেতে ভোগান্তি বাড়ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। অন্যদিকে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লম্বা লাইন, তার ওপর নেই বসার ব্যবস্থা। গরমে অসুস্থ রোগী নিয়ে বিপাকে স্বজনরা। কারও কারও সেবা নিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তারপরও সুষ্ঠ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী।
শরীয়তপুর বাসিন্দা আব্দুর কাদের জানান, তার তিন বছর বয়সী শিশু জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছে গত দুইদিন আগে। গত রোববার রাতে জাজিরা সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদের ছুটির মধ্যে সেবা মিলবে না। গুরুতর অসুস্থ শিশু নিয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন তার বাবা। ঈেেদও ছুটির কারণে ডাক্তার পাচ্ছে না তারা। এখানেও সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
চার বছরের পুত্র সন্তানকে নিয়ে রোববার সকাল ১০টার দিকে শিশু হাসপাতালে হাজির হন পুরান ঢাকা বাসিন্দা রনি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও আমার আগে ৪০ থেকে ৫০ জন দাঁড়িয়ে আছে। অসুস্থ সন্তান নিয়ে কি এতো সময় অপেক্ষা করা যায়। কি করবো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জরুরি বিভাগ চলছে মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে। রোগীর যে দীর্ঘ লাইন তাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় কমে কারও পক্ষে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর চাপ বাড়ায় জরুরি বিভাগে এঅবস্থা হয়েছে। চিকিৎসক সল্পতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের একজন নার্স বলেন, ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে চিকিৎসকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সব সময় সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসক হাসপাতালে নেই। বিশেষ করে রাতের বেলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় হাজার রোগীর ভরসা জরুরি বিভাগের দুই চিকিৎসক। ফলে সব চাপ এসে নার্সদের ওপর পড়ে। অনেক সময় রোগীর স্বজনেরা বিরক্ত হয়ে নার্সদের বকাঝকা করেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যেও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এর পরও যদি জরুরি কারও আইসিইউ বা শয্যা প্রয়োজন হয়, তাহলেও আমাদেও বেগ পেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে শিশুদের পাতলা কাপড় পরিধানসহ তাদের খাওয়া দাওয়ায় সতর্ক হতে হবে। শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের আরও যতœবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যপারে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাসনিন বেগম বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও বায়ুদূষণজনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া ও হাঁচি-কাশি শ্বসকষ্ট নিয়ে। তাদের এক অংশের তীব্র জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখনও এসব রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে রাজধানীর সরকারী ৮টি হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। তবে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে রোগী ভোগান্তি বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ডের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতাল সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি ও ইনডোর সার্ভিস চালু থাকবে। ছুটির দিনেও বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা কার্যক্রম চালু রাখবে হাসপাতালগুলো। কিন্তু বাস্তবে এ কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। ছুটিতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নেই। এরফলে হাসপাতালে আগত রোগী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসা একটি জরুরি সেবা, এটা বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ঈদে ছুটির দিনগুলোতেও হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান থাকছে। সরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সেবা ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকছে। তবে ঈদের দিন, ঈদের আগের এবং পরের দিন আউটডোর বা বর্হিবিভাগে রোগী দেখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে চিকিৎসক এবং নার্স রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। বাস্তবে ছুটির দিনে হাসপাতালে অপ্রতুল চিকিৎসক কাজ করছেন।
ঈদের ছুটিতে হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। ঈদের ছুটিতেও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। তিনদিন আউটডোর সেবা বন্ধ থাকবে। চিকিৎসকরা রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করবেন। এবার যদিও সরকারি ছুটি তিনদিন কিন্তু চিকিৎসকদের আসলে ছুটি নাই।
অপরদিকে সারাদেশের মধ্যে চিকিৎসাসেবায় মানুষের সবচেয়ে বেশি ভরসার জায়গা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে দৈনিক এক হাজার জনবল কর্মরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বেশিরভাগ জরুরি বিভাগের রোগী আসে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। ছুটির মধ্যে প্রতিদিন ১৫০ জন ডাক্তার, ৫০০ নার্স ও অন্য কর্মচারীরা মিলে এক হাজারের বেশি জনবল নিয়োজিত থাকবে। আমরা প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহও নিশ্চিত করেছি।
এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান বলেন, ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং পরের দিন আমাদের আউটডোর বন্ধ থাকবে। এর আগে পরে আউটডোরে রোগীরা চিকিৎসা পাবেন, সেই ব্যবস্থা করা আছে। এছাড়াও আমাদের হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগ ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে। অমুসলিম ডাক্তারদের দিয়ে পাঁচ দিনের রোস্টার করা আছে।
তিনি বলেন, জরুরি অপারেশন থিয়েটার, সার্জারি এবং গাইনি বিভাগের টিম রেডি আছে, চালু থাকবে। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডের রোস্টার রেডি করা আছে, সেই অনুযায়ী ডিউটিতে থাকবে। আমাদের হাসপাতালের সব স্তরে চিকিৎসক আছে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণি, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং নার্স ডিউটিতে উপস্থিত থাকবে। ফলে, আশা করি কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তারপরও ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারির সংখ্যা নগন্য। যার ফলে রোগী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোনো খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের দিন বরাবরের মতোই বিশেষ খাবার বরাদ্দ করা হবে। ঈদের দিনে রোগীর জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সকালে রোগীদের সেমাই ফিরনি খেতে দেওয়া হয়, এছাড়াও দুপুরে পোলাও খাসির মাংস এবং ডিম দেওয়া হয়। সাথে রয়েছে মিষ্টি।


নিউজটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/