নরসিংদী প্রতিনিধি
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হচ্ছে ইলিশ। আর এই ইলিশ মাছ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ। এটা শুধুমাত্র আমাদের পছন্দের খাবারই নয় বরং হাজারো জেলের জীবন-জীবিকার মাধ্যমও বটে। ইলিশ শুধু একটি মাছই নয় এই মাছ হচ্ছে বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির প্রতীক। কিন্তু এই মাছের উপর নির্ভর করে আছে আমাদের দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ। প্রতিদিন ভোর হলেই জেলেরা মেঘনা নদীতে ছুটে যান মাছ ধরার আশায়। জাল ফেলেন নদীতে। আর মনে মনে অপেক্ষা করেন রূপালী ইলিশ ধরা পড়বে কিনা। এক সময় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। কালের আর্বতে এই রূপালী ইলিশ আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
এর বড় কারণ হচ্ছে জাটকা নিধন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে চলছে জাটক মাছ ধরার মহোৎসব। এসব জাটকা মাছ জেলেরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন হাট বাজারে এবং শহরের পাড়া মহল্লায় অবাধে বিক্রি করছে। অনেকের বাসাবাড়ি থেকে জাটকার মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এমনটি হবার কথা ছিল না। সরেজমিনে এমপি মার্কেট, নরসিংদী বড় বাজার, নতুন বাজার, বউ বাজার, হোসেন বাজার, করিমপুর বাজার, ভেলানগর বাজার, বটতলা বাজারে বসেছে জাটকার হাট। জেলার সর্বত্র জাটকা বিক্রি যেন এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। প্রতি কেজি জাটকা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের টাক্সফোর্স ও নৌ-পুলিশ অভিযান চালালেও মৎস্য বিভাগের কোন অভিযান নেই। জেলা পুলিশেরও জাটকার বিষয়ে কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। অনেকটা ফ্রিস্টাইলে জাটকা নিধন এবং ক্রয়-বিক্রয় চলছে। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সমাজের সচেতন মহল বলছেন এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মেঘনা নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দিবে। এতে করে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দিবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা মাছ ধরছেন। এক শ্রেণীর মৌসুমী জেলে ও ভাসমান আড়ৎদার সেজে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যক্তির লাভের আশায় জাটকা ধ্বংস করছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছে। প্রতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল এই দুইমাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জালসহ বিভিন্ন জাল ফেলে জাটকাসহ ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছ শিকার করছে জেলেরা। বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: ফয়সাল আজম এর সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা মৎস্য বিভাগের আয়োজনে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে লিফলেট ও মাইকিং করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রয়োজনীয় জনবল এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জোরদার অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এছাড়া এ অভিযান অব্যাহত থাকলে বলে দাবী করলেও কর্তৃপক্ষ নীরব থাকায় নির্বিঘ্নে চলছে জেলেদের জাটকা নিধন। অপর দিকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হলেও বাস্তবে অভয়াশ্রমে দেখা মেলেনি কোন অভিযান। এছাড়া নেই কোন জাটকা সংরক্ষণের প্রচারণা। নামমাত্র জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মিটিং দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। জেলেদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, দৈনিক আয়নির্ভর জীবন যাপন করছেন। নিষিদ্ধ সময়ে খাদ্য সহায়তা পান না জেলেরা। এজন্য জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক মাছ শিকার করছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো জানান, এ বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো।
ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তিনি আরো বলেন আমাদের সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একজন মহিলা। তার দ্বারা কোন কিছুই করা সম্ভব না। কাজের প্রতি তার কোন দায়িত্ব নেই বলেই চলে। আমরা চেষ্টা করছি তার পরিবর্তে এখানে একজন পুরুষ কর্মকর্তা দেওয়ার জন্য। সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাসকিরা বেগমের সাথে আলাপ করলে তিনি তেলেবুগুনে জ্বলে উঠেন এবং এ প্রতিবেদককে বলেন জাটকা ধরার ব্যাপারে আমি আপনার সাথে কথা বলতে নারাজ। এটা মৎস্য বিভাগের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার বিরুদ্ধে যা পারেন লিখেন, এতে আমার কিছুই আসে যায় না।
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com