বিশেষ প্রতিনিধি
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহকর্মী মেহরাজের মঙ্গে আসা দুই তরুনীর দিকে চেয়ে হাসছিলো শিক্ষার্থী পারভেজ। এই হাসিই পারভেজের জন্য কাল হলো। শেষ অবধি তাকে প্রান দিতে হয়েছে সহপাঠী ও বহিরাগতদের হাতে। পারভেজের আকস্মিক অকাল মৃত্যুতে প্রাইম এশিয়া বিশ্বদ্যিালয়ে এক নিমেষে নেমে আসে শোকের ছায়া। পারভেজের ঘাতকদের বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, পারভেজ হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ জন জড়িত। অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেফতার এবং বিচারের আওতায় আনা দাবি জানিয়েছে।
এদিকে পারভেজ হত্যা মামলায় গতকাল সোমবার গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানিকে (১৯) সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.ছানাউল্যাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন। আসামীরা বনানী বিদ্যানিকেতনের সাবেক শিক্ষার্থী। কেউই প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী মাহবুবুর রহমান রিমান্ড বাতিলসহ জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাতদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে ভোরে মহাখালীর ওয়ারলেস গেটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে রাকিব বলেন, সকালে দু-তিন জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন পারভেজ। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠা
ৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে এদিকে তাকাচ্ছ কেন? এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেবো। এর জের ধরে পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
রাকিব আরো বলেন, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ জন জড়িত। গত ২০ এপ্রিল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৩ ব্যাচের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার বিচার দাবি করে ছাত্রদল। ছাত্রনেতাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাকিব বলেন, দু-তিন জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন পারভেজ। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে এদিকে তাকাচ্ছ কেন? এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেবো’ এ ধরনের টিজিং ও উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন।
পারভেজ জবাবে বলেন, কী দোষ করেছি ভাই?’ এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয়পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
রাকিব বলেন, প্রচ- উচ্ছৃঙ্খল মেহেরাজ ইসলাম গং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করে দেয়া এই মীমাংসা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০-১৫টি লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে বহিরাগতদের ডেকে আনেন এবং পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালান। এ হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম-সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর নেতৃত্বে এলাকার বেশকিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। তারা ছুরি দিয়ে পারভেজের বুকে আঘাত করে হত্যা করে।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মীমাংসার পর যখন সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল, তখন শহীদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনো ধরনের সহায়তা করেনি।
রাকিব আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দৃঢভাবে বিশ্বাস করি, পারভেজের ওপর চালানো এ হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে প্রক্টরের মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এই নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারত্ব কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলে সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। ক্যাম্পাস তো বটেই, এমনকি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা নতুন নামে সেই পুরোনো ফ্যাসিবাদ। এই চলমান দখলদারত্ব ও সন্ত্রাসই এই হত্যার পেছনে খুনি-সন্ত্রাসীদের সাহস ও মদত জুগিয়েছে।
তিনি বলেন,দিন দিন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ডিহিউম্যানাইজ করার যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় শহীদ পারভেজদের হত্যাকান্ডের বৈধতা উৎপাদনের জন্য। পারভেজের খুনিদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত সবার যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অপকৌশল অনুকরণ করে বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে ছাত্রদলকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কৌশল অবলম্বন করছে।
রাকিব বলেন, এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে অশোভনীয় ভাষায় যে পোস্ট দেয়া হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। তারা অভিযুক্তদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে অশোভন ভাষায় আক্রমণ ও তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়াটাই প্রমাণ করে, তারা অপরাধ আড়াল করতে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি, এই সংগঠনের প্রতিটি কমিটিতে যেভাবে সাবেক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে, তারা যেভাবে সাবেক ছাত্রলীগারদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন, এই অশোভন ভাষা সেই প্রক্রিয়া ও চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশাহীন সঠিক ও ইতিবাচক ধারার ছাত্ররাজনীতি চর্চার আহ্বান জানাই।
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সবার প্রতি সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে তারা বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় আলোচনা করলেও, বিভিন্ন সরকারি নিয়োগগুলো এককভাবে বৈষম্যবিরোধীদের তালিকা ধরে দিলেও তারা ছাত্রদলের মতো বৃহত্তম ও জুলাই আন্দোলনের সর্বাধিক শহীদের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে বসে কোনো আলোচনা করেননি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রশাসন থেকে আমরা যথাযথ সহযোগিতাও পাই না। প্রশাসনে এখনও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রেতাত্মা লুকিয়ে আছে। এদের উৎসাহ ও আশ্রয় দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বিভিন্ন ঘটনায় সেটা বারবার প্রমাণ হচ্ছে। আমরা আবারও এই নির্মম হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এর আগে ১৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিবাদের জেরে ছুরিকাঘাতে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com