হালিম মোহাম্মদ
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
দীর্ঘ সতের বছর পর হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমান। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জুবাইদা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রায় এক থেকে দেড় মিনিট মাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে জুবাইদাকে। দীর্ঘ সতের বছর পর মা মেয়ের সাক্ষাত যেন সেখানের সকলের মেলবন্ধনে পরিনত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর অভিজাত স্কয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালের একাধিক নার্স ও কর্মচারী অশ্রুসজল চোখে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরে অসুস্থ মায়ের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
এবিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ডা. জুবাইদা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে বের হয়ে ৬টা ৪০ মিনিটে স্কয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। মা-মেয়ের এই পুনর্মিলন দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত আবেগময়। তাদের এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় কেউ চোখের পানি ধওে রাখতে পারেনি।
সম্প্রতি বয়সজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। দেশে ফেরার পরপরই মাকে দেখতে মায়ের সান্নিধ্য পেতে ছুটে যান ডা. জুবাইদা। সেখানে মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান। চিকিৎসকের কাছে মায়ের জেনারেল কন্ডিশনসহ চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
এর আগে মঙ্গলবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সহায়তায় একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ডা. জুবাইদা রহমান, তারেক রহমানের প্রয়াত ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান এবং অন্যান্য সফরসঙ্গীরা একযোগে ঢাকায় ফেরেন। সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে তাদের বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাদের স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
জানা গেছে, দেশে অবস্থানকালে ডা. জুবাইদা ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত তার বাবার বাসভবন ‘মাহবুব ভবনে’ থাকবেন। তবে দেশে ফেরার পর তিনি প্রথমে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার বাসভবনে।
এদিকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার জন্য যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বিদায় ক্ষণে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলে তারেক রহমানকে ছেড়ে দেশে ফিরে আসতে তার কষ্ট হচ্ছিল। মাকে জড়িয়ে ধরেন তারেক রহমান। তা খালেদাজিয়া ছেলের কপালে চুমু খেয়ে আল্লাহর কাছে সপে দিলেন একমাত্র ছেলেকে। এ সময় বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যেও অবতারনা হয়। এসময় দুই পুত্রবধু, নাতনী ও সঙ্গীয় সকলে মর্মাহত হন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। ছেলে তারেক রহমান বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, তুমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে? উত্তরে তারেক রহমান বলেন, তুমি বিমানে ওঠার পর মেয়ে জাইমাকে নিয়ে চলে যাব।এরপর তারেক জিয়ার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, তোমরা ভাইয়ার (তারেক) খেয়াল রেখো। এ সময় তারেককে অশ্রুসজল চোখে মাকে বিদায় জানাতে দেখা গেছে। এসময় খালেদা জিয়াকে একটি হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তার পাশে নাতনি জাইমা ও দুই পুত্রবধূকে দেখা যায়।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারেক রহমান নিজ বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে বের হন। যুক্তরাজ্য সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিট এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসহ ৯ জন। গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চার মাস পরে আবার সেই বাহনেই দেশে ফিরছেন তিনি। তারেক রহমান, ডা. জুবাইদা এবং তাদের কন্যা জাইমা রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছেন।
https://slotbet.online/