সারাদেশে তাপদাহে পুড়ছে শ্রমজীবি মানুষ

Reporter Name / ৩৬ Time View
Update : শনিবার, ১০ মে, ২০২৫


হালিম মোহাম্মদ

  • আপডেট সময় :
    ০৪:৫৪:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫






    বার পড়া হয়েছে

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News)
ফিডটি

দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার তাপপ্রবাহের তীব্রতা আগের রেকর্ডের চেয়ে বেড়েছে। তবে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। রাজধানীতেও বছরের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপপ্রবাহের ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গরমের কারনে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালগুলোতে এ সংক্রান্ত রোগী বাড়ছে। হার্টের সমস্যা বা এলাজিতে আক্রান্ত রোগীর হিটষ্ট্রোকে আক্রান্তের সম্ভাবনা খুব বেশী।
সারা দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হচ্ছে। তীব্র গরমে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা। এ অবস্থায় শিশুদের সুরক্ষায় রোদ পরিহারের পাশাপাশি যত্রতত্র পানি, রাস্তার পাশের খোলা জুস-শরবত পান করা থেকে বিরত থাকা এবং আইসক্রিম না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট (শিশু হাসপাতাল), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে এসব হাসপাতালে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিনের গরমে শুধু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিক শিশু। মুগদা হাসপাতালের শিশু বিভাগেও ইতোমধ্যে রোগীতে সব শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও।
মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফিরোজ জানান, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় আসার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তিন দিন ধরে পেট খারাপের কারণে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে আসছে জ্বর।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানান, গত কয়েকদিনের গরমে শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই গরমের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। বর্তমানে আমার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। এছাড়া জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার রোগী তো আছেই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় আক্রান্তের এ হার আমরা অস্বাভাবিক বলছি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০৭, ২০৮ ও ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শয্যায় দুজন করে রোগী আছে। বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে আছে দ্বিগুণ রোগী। এতে করে সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। তবে গরমে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও বেগ পেতে হচ্ছে সেখানকার গরমে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, গরমে রোগীর চাপ বাড়েই। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢামেকে রোগীর চাপ আগামী কয়েকদিনে আরও বাড়তে পারে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাইখ আবদুল্লাহ জানান, ঈদের আগে দিনে গড়ে রোগী আসতো ২০০-এর মতো। এখন ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
তাপপ্রবাহের কারণে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) ঢাকা হাসপাতালে। ঈদের পর থেকে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে রোগীদের। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানান, সাধারণ সময়ে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ রোগী আসে। বর্তমানে তা বেড়ে ৫০০ থেকে ৬০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবির চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া। প্রচ- রোদ ও গরমে শিশুদের যথাসম্ভব বাসায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কোনোভাবেই যেন তাদের বাইরে বের করা না হয়। কারণ, গরমে বাচ্চারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাইরে বের হলে অবশ্যই বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে, প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানান সেখানকার চিকিৎসকরা। তাদের মতে, জ্বরের সঙ্গে বমি, টাইফয়েড, পাতলা পায়খানা হয়ে পানিশূন্যতা, এ ছাড়া পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে আসছে বেশির ভাগ রোগী। ভর্তির প্রয়োজন আছে এমন শিশুর সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয় বলেও জানান তারা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামছে, তাতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ সময় শিশুদের বাইরে বের না করানোই ভালো। শিশুদের গরম খাবার দিতে হবে। বাইরের খাবার বা পানি খাওয়ানো যাবে না।’
চিকিৎসকের মতে, যাদের নানা রকম অসুস্থতা আছে, তাদের এ সময় খাবারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খেয়েই শুয়ে পড়বেন না বা দিবানিদ্রা দিতে যাবেন না। একবারে অতিরিক্ত খাবেন না, এক দিনেই গরু, খাসি, কলিজা, পায়া সব পদ খেয়ে ফেলতে হবে, এমনটা নয়। রান্নার সময় চেষ্টা করুন অতিরিক্ত তেল-মসলা ব্যবহার না করতে। একসঙ্গে অনেক রান্না করে তারপর বাসি খাবার— এই গরমে খাবেন না। সাধারণ গ্যাসের সমস্যা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স অথবা বদহজম হলে প্রাথমিকভাবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে ও প্রচুর আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে স্যালাইন পান করতে হবে। তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে বা বারবার বমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।
এদিকে তাপমাত্রার পারদ শুধু ওপরের দিকেই উঠছে। এটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে,আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত আবহাওয়া এমন থাকতে পারে। এমনকি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এদিকে দেশজুড়ে জারি হওয়া হিট অ্যালার্টও আগের মতোই বলবৎ আছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা অধিদপ্তরের পক্ষে তাপপ্রবাহের বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেন। সেখানে বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। দুপুর দুইটা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও কোথাও তা তীব্র তাপপ্রবাহ আকারে বিরাজ করতে পারে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি বছরে দুই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৩ এপ্রিল যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাও এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।


নিউজটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/