গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মো. তানভীর আলম; যখনই যে কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর পরেও তিনি যেন রয়ে গেছেন অদৃশ্য এক নিরাপত্তাবলয়ের ভেতর। বর্তমানে তিনি অধিদপ্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল (ইএম) বিভাগ-৪, সচিবালয় এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন।
বিগত সরকারের সময় গণপূর্তের যে কয়েকজন প্রকৌশলী প্রভাব বিস্তার করে ঢাকায় জেকে বসেছিলেন তিনিও ছিলেন সেই তালিকায়। এর আগে পাঁচ বছর সাত মাস ইএম বিভাগ-৩ তে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকাতেই ঘুরেফিরে তার অবস্থান, যা ইঙ্গিত দেয় তার প্রভাব ও প্রাসঙ্গিক শক্তি কতটা বিস্তৃত।
আজিমপুর ও মতিঝিল সরকারি আবাসন এলাকায় লিফট স্থাপন প্রকল্পে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ৬৮টি লিফট স্থাপনের দরপত্রে ১৭টি নির্ধারিত শর্ত থাকলেও, রওশন এলিভেটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রওশন এলিভেটরসের সরবরাহকারী ইতালীয় কোম্পানি “মোভিলিফট” দপরত্রের শর্তগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে, উৎপাদন অভিজ্ঞতা ২০ বছর না থাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নিজস্বভাবে তৈরি না করায় প্রতিষ্ঠানটি শর্ত ভঙ্গ করে। তবুও তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যা পরিষ্কারভাবে দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। আরও আশ্চর্য, রওশন এলিভেটরস ১৯ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে কাজ পায়; যা অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছে।
এর বাইরেও আজিমপুর সরকারি কলোনিতে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২তলা স্টিল স্ট্রাকচারের গাড়ি পার্কিং শেড নির্মাণেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। ডিপিপিতে যেখানে ২৮৮টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা দেখানো হয়েছিল, সেখানে বাস্তবে তৈরি হওয়া অবকাঠামোতে জায়গা হয়েছে ২৪০টি গাড়ির। ফলে প্রায় ১১ কোটি টাকার সাশ্রয় হলেও সেই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত না দিয়ে আত্মসাতের পাঁয়তারা করা হয়। পরবর্তীতে এই টাকা ভাগাভাগির জন্য একই কাজের নামে অতিরিক্ত দরপত্র আহ্বান করে রং ও কভার তৈরির নামে অর্থ উত্তোলন করা হয়, যা প্রকল্পের মূল কাজের মধ্যেই ছিল।
অভিযোগে আরো জানা যায়, তানভীর আলম দায়িত্বে থাকাকালে ইএম বিভাগ-৩ এ রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন ভবনেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বিভাগে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। অথচ একই সময়ে বাস্তব মেরামতের পরিমাণ ও দরপত্রের কার্যক্রম যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিজস্ব তদন্তেও এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তারপরও এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বারবার তাকে সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে কেন্দ্র করে যে শক্তিশালী দুষ্টচক্র রয়েছে, তানভীর আলম সেখানকার অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে তিরস্কারের বদলে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। সবশেষ গতবছর সেপ্টেম্বরে তাকে আজিমপুর থেকে সচিবালয়ের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দুষ্টচক্রের বেশ কয়েকজনকে ঢাকার বাহিরে বদলি করা হলেও, তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মো. তানভীর আলমের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
https://slotbet.online/