“জমি আছে, ঘর নেই”—এমন অসহায় বাস্তবতায় থাকা মোংলার ৯৪টি কর্মহীন, হতদরিদ্র ও গৃহহীন পরিবার এবার পেয়েছে স্বপ্নের ঠিকানা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নবলোক’ জলবায়ু সহনশীল ঘরের চাবি এসব পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের উলুবুনিয়া এলাকায় ‘রেজিলিয়েন্ট হাউজিং ফর লাইভলিহুড’ (RHL) প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ২০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। পর্যায়ক্রমে বাকি ঘরগুলোও বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নবলোক কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ুজনিত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। মোংলা, যা সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলীয় এলাকা, সেখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত জোয়ার, নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতা নিয়মিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী বারবার ঘরবাড়ি হারিয়ে পড়ছে চরম মানবিক বিপর্যয়ে।
এই বাস্তবতা বিবেচনায়, পিকেএসএফ-এর সহায়তায় ‘নবলোক’ মোংলার সোনাইলতলা, চাঁদপাই, চিলা, মিঠাখালী ও সুন্দরবন ইউনিয়নে উঁচু জমিতে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ঘর নির্মাণ করছে।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২২ মে সোনাইলতলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উলুবুনিয়া এলাকায় হতদরিদ্র রাবেয়া বেগমের বাড়িতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২০ জন উপকারভোগীর হাতে দুর্যোগ সহনশীল ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নবলোক পরিষদের উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জোনাল ম্যানেজার মো. মতিউর রহমান, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদ হাসান এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মো. আব্দুল খালেক, আবু সাইদ সিদ্দিকী, মো. জাহিদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলামসহ RHL প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্প সমন্বয়কারী কাজী তোবারক হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও প্রকল্পের ফোকাল পারসন মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, “এই প্রকল্প শুধু ঘর নির্মাণ নয়, বরং এটি দুর্যোগ মোকাবেলায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পথ দেখিয়েছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি উপকারভোগীদের ঘর যথাযথভাবে ব্যবহারের এবং তা সংরক্ষণের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের মাত্রা ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে হতদরিদ্রদের জন্য নিরাপদ ঘর নির্মাণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবেলায় নবলোক নিরলসভাবে কাজ করছে।”
উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত মানের উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং দুর্যোগ প্রতিরোধে সক্ষম। পাশাপাশি উপকারভোগীদের জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতিতে সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন, বৃক্ষরোপণ, কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ শুধু দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে নয়, বরং জলবায়ু অভিযোজন ও সারাদেশে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
https://slotbet.online/