“আমার মেয়ে বড় হয়ে নিজেকে শহীদ আরিফুর রহমানের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে কিনা, সেই ভয় আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে”— এমন হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলেছেন শহীদ আরিফুর রহমানের স্ত্রী। তিনি বলেন, “যখন আমার স্বামী শহীদ হন, তখন আমার মেয়ের বয়স মাত্র এক বছর আট মাস। তিনি আমাদের কথা না ভেবে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু আজকে যেভাবে জুলাই আন্দোলনকে নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, তাতে আমার ভয় হয়— ভবিষ্যতে আমার মেয়ে নিজের বাবার পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করবে না তো?”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা দয়া করে জুলাইকে ভুলে যাবেন না। সবসময় জুলাইয়ের কথা মনে রাখবেন।”
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা হলে জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর অফিস (ইউএনআরসিও) এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল— ‘Dissemination of the UN Fact-Finding Report’।
আলোচনা সভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহার’ সংক্রান্ত তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর বিশদ আলোচনা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সুষ্মিতা রায় এবং এইচআরএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম।
জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আরিফুর রহমানের স্ত্রী এবং শহীদ আবদুল ওয়াদুদের মা।
এইচআরএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, “জুলাই আন্দোলন নিয়ে তৈরি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনটি কোনো রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রস্তুত নয়, এটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তৈরি। ফলে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটি আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।”
শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবা বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্য কমেছে, যার সুফল সবাই পেয়েছে। কিন্তু এর মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের সন্তানকে হারিয়ে।”
উপাচার্য অধ্যাপক তৌফিক আলম বলেন, “জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বাংলায় অনুবাদ হওয়ায় দেশের মানুষ এখন সহজেই বিষয়গুলো জানতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে যেন আর কখনো জুলাই আন্দোলনের মতো গণহত্যার ঘটনা না ঘটে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আর কখনো দেশের নাগরিকদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় না— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
https://slotbet.online/