কক্সবাজার জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ভেতরের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে চলতি মৌসুমে উৎপাদন করা হয়েছে ৮,৫০০ কেজি সবজি, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
১২.৮৬ একর জমির উপর কক্সবাজার শহরের উপকণ্ঠে নির্মিত এ কারাগারে ভেতরে ৮.০৯ একর জমি রয়েছে। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে এই কারাগারে প্রথমবারের মতো পতিত জমি চাষের আওতায় এনে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীতে আরও পরিকল্পিতভাবে সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শুধু কৃষিকাজেই নয়, কারাবন্দীদের সেবা ও সুযোগ-সুবিধায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন বন্দিরা প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৫ টাকায় স্বজনদের সঙ্গে ১০ মিনিট করে ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে পণ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক কম, যা বর্তমানে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আগে এসব পণ্যের মূল্য ছিল দ্বিগুণ।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আসা দক্ষ জেল সুপার মো. জাবেদ মেহেদী এবং জেলার আবু মুছার কঠোর নজরদারিতে সকল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর হয়েছে। বন্দিদের অনেকেই জানান, বর্তমানে তারা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। সাজাপ্রাপ্ত বন্দি সওকত বলেন, “আমি গত ৬ বছর ধরে এখানে আছি, কিন্তু গত ৬ মাসে যে পরিবর্তন এসেছে তা অভূতপূর্ব।”
বর্তমানে বন্দিদের সেবার মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। কারা অভ্যন্তরের পরিবেশ এখন স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
সদ্য জামিনে মুক্ত হওয়া বন্দিরা বলেন, বর্তমান জেল সুপার জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছার নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা কারাগার অন্য কারাগারের তুলনায় ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগে প্রচলিত ছিল ‘সিট বাণিজ্য’ ও হাসপাতালের সুযোগ নিয়ে নানা অনিয়ম, যা এখন বন্ধ। জেল কোড অনুযায়ী বন্দিরা সমানভাবে প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন।
জেল সুপারের নেতৃত্বে কারাগারে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা, ন্যায্যমূল্যের ক্যান্টিন, পানি সরবরাহ, উন্নত খাবার, স্যানিটেশন ব্যবস্থা সবকিছুই রয়েছে নিয়মিত তদারকির আওতায়। জেল সুপার একজন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত। জেলারও একজন মানবিক ব্যক্তি।
কারা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন ৩ জন চিকিৎসক। বন্দি জালাল আহমদ জানান, “বর্তমানে কারাগারের পরিবেশ অনেক উন্নত। সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।”
ডেপুটি জেলার আবদু সোবহান বলেন, “আমি যোগদানের পর থেকেই বন্দিদের সরাসরি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সতর্ক থাকি যাতে কেউ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে।”
উল্লেখ্য, এই কারাগারে ধারণক্ষমতা ৮৩০ জন, কিন্তু বর্তমানে বন্দি রয়েছে প্রায় ৩,০০০। যারা মায়ের সঙ্গে বিনা অপরাধে জেল খাটছে, সেইসব শিশুদের প্রতিদিন দু’বার দুধ দেওয়া হয়। তাদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার ও শিক্ষক দ্বারা মৌলিক শিক্ষা।
সম্প্রতি ৩০০ জন বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ছয়তলা একটি ভবন চালু হয়েছে, যা বন্দিদের দুর্ভোগ কমিয়েছে। আইসিআরসি সহযোগিতায় দুইটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। মশা নিধনে রয়েছে ফগার মেশিন।
জেলার বলেন, “আমরা কারাগারের সেবার মান বাড়িয়েছি। যে কোন অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। অধূমপায়ীদের জন্য রয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। ধূমপান বিরোধী সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।”
জেল সুপার জাবেদ মেহেদী বলেন, “দেশে যেভাবে সংস্কার চলছে, তার প্রতিফলন কক্সবাজার কারাগারেও পড়েছে। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু আমরা শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করছি। যারা আগের অনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তারাই এখন সমালোচনা করছেন। ফেরেশতা এনে পরিচালনা করলেও কেউ না কেউ সমালোচনা করবেই।”
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, ইনডোর-আউটডোর খেলা, বিনোদনসহ মানবাধিকার সম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। জেলার বলেন, “আমরা অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।”
https://slotbet.online/