গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
শুক্রবার (২৩ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার স্যাটার্ন গার্মেন্টস কারখানার সামনে রণক্ষেত্রের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, কারখানাটির ওয়েস্টেজ (ঝুট) নামানোকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির দুটি অংশের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এদিন সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ধারণ করা হয় অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে, চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ শুরু হয়। চারদিকে ধোঁয়া আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছিলাম।”
আহতদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক কালবেলার টঙ্গী প্রতিনিধি মহিউদ্দিন রিপন, এশিয়ান টেলিভিশনের গাজীপুর প্রতিনিধি আরিফ চৌধুরী, আনন্দ টেলিভিশনের সাংবাদিক রায়হান মিধা, স্থানীয় সাংবাদিক মারুফ, পুলিশ সদস্য আজিজ ও ফরহাদসহ আরও কয়েকজন সাধারণ মানুষ।
ঘটনার সূত্রপাত ৫০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুনের ঝুট নামাতে যাওয়ার পর। তিনি দাবি করেন, “স্যাটার্ন কারখানার সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘নূর এন্টারপ্রাইজ’-এর বৈধ চুক্তি রয়েছে। গত আগস্ট মাস থেকে নিয়মিতভাবে কারখানার ওয়েস্টেজ নিচ্ছি। কিন্তু হালিম মোল্লার অনুসারীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে এবং আজ তারা আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় ২০০ জন এসে আমাদের উপর চড়াও হয়, ককটেল ফাটায় এবং সাংবাদিক-পুলিশের উপরও হামলা চালায়। এটি পরিকল্পিত অপপ্রচার, যার মাধ্যমে আমাকে এবং আমার রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।”
অন্যদিকে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লার ঘনিষ্ঠ নেতা কাজী মামুন এক ভিন্ন বক্তব্য দেন। তার ভাষ্য, “কাজী হুমায়ুন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সহায়তা করছেন এবং বিএনপির ভিতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। আমরা তার ব্যবসা কার্যক্রমে বাধা দিয়েছি বলেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কিন্তু তার পক্ষের লোকজনই প্রথমে ককটেল হামলা চালায়।”
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান জানান, “সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে একাধিক পুলিশ টিম পাঠানো হয়। পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এ ঘটনায় পুরো গাজীপুরা এলাকা জুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাটে লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে। স্থানীয়রা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুর অঞ্চলে ঝুট ব্যবসাকে ঘিরে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তবে এবারের সহিংসতা ভিন্নমাত্রার আতঙ্ক তৈরি করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
https://slotbet.online/