কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাংয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় এক শিক্ষকসহ দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে শিক্ষক মৌলভী ইউনুস (৪০)-এর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অপর আহত ব্যক্তি হলেন ফাহাদ (১৯)। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার শিক্ষক ইউনুস তাঁর মালিকানাধীন মাছ ধরার নৌকায় ফাহাদকে সঙ্গে নিয়ে সাবরাং মুন্ডার ডেইল সি-বিচ নৌঘাটে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে সাবরাং পানছড়ি পাড়া এলাকার ব্রীজের মুখে পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী তাঁদের পথরোধ করে।
অভিযোগে বলা হয়, সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামসুল আলম, তার ভাই আলমগীর, তোফায়েল, জাহাঙ্গীর, নুরুল আলম ওরফে নুরু এবং লেজির পাড়ার মো. আলম, ফয়েজ, মো. আলম ওরফে সো. আলম, কাদেরসহ ১৪-১৫ জনের একটি দল অস্ত্রসহ অবস্থান নেয়। তারা পরিকল্পিতভাবে ইউনুস ও ফাহাদকে তুলে নিয়ে সাবরাং পানছড়ি পাড়ায় নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে টেকনাফ হাসপাতালে এবং পরে গুরুতর আহত ইউনুসকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
এ ঘটনায় আহত ইউনুসের ভাই মো. আয়ুব বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক, সন্ত্রাস ও অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর আত্মসমর্পণকারী অনেক মাদক কারবারি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন টেকনাফের ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবরাং ইউপি সদস্য শামসুল আলম।
শামসুল আলম সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত ইয়াবা কারবারি ‘ইয়াবা বদি’ খ্যাত আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সরকার পরিবর্তনের পর অনেক আত্মসমর্পণকারী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও শামসুল আলম এখনও প্রকাশ্যে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর ভাইয়েরাও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। বড় ভাই নুরুল আলম নুরু সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ।
সচেতন মহল মনে করছে, এ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্থানীয়রা জানান, এ চক্রের প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় ধারণা করা হয়েছিল সীমান্তে ইয়াবা কারবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শামসুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা মাদক ব্যবসা নতুন করে গুছিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদকের চালান মজুদ করা হচ্ছে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির ও নির্জন এলাকায়। সেখান থেকে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শামসুল আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
https://slotbet.online/