[ad_1]
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের মতানৈক্য পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও জটিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—ড. ইউনূস কি বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দায়িত্বে থাকবেন, নাকি রাজনৈতিক চাপ ও বিচ্ছিন্নতার মুখে পদত্যাগ করবেন?
বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানায়, গত চারদিন বিএনপি বারবার চেষ্টা করেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও ইউনূস তাতে সাড়া দেননি। রাজনৈতিক শূন্যতার এই সময়ে এনসিপি ব্যতীত অন্য কোনো দলের সঙ্গে তার কার্যকর যোগাযোগ নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। দুটি দলই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত হওয়ার পথে। তবে এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে একটি রহস্যময় চক্র, যা ড. ইউনূসকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাত সদস্যবিশিষ্ট এই চক্রে রয়েছে চারজন অভ্যন্তরীণ এবং তিনজন বাহ্যিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা নির্বাচনী পথ রুদ্ধ করে ড. ইউনূসকে জনবিচ্ছিন্ন করতে চাইছে।
সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আলী রীয়াজের সঙ্গে ড. ইউনূসের এক গোপন বৈঠক হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু স্পষ্ট না হলেও, ধারণা করা হচ্ছে—সেনাপ্রধানের বক্তব্য ও বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার মূল্যায়ন নিয়েই তারা কথা বলেছেন।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সরাসরি সরকারের একাধিক নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। অথচ এই বিষয়ে ইউনূস দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং তার উপদেষ্টারা বিষয়টি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাখাইন প্রদেশে প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর নিয়েও সরকারের ভেতর-বাইরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের চেষ্টা চললেও রাজনৈতিক দলগুলো একে ‘অন্ধকারে রাখার কৌশল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেনাবাহিনী একে ‘জাতির জন্য আত্মঘাতী’ আখ্যা দিয়ে করিডোরের বিরোধিতা করেছে।
মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও চট্টগ্রাম বন্দরের সম্ভাব্য বিদেশি হস্তান্তর নিয়েও সেনাপ্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক আলোচিত দরবার বৈঠকে সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়। যদিও সরকারঘনিষ্ঠ কিছু রাজনৈতিক নেতা সেনাবাহিনীকে দায়ী করছেন, বাস্তবতা হলো—এই অভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা ছিল মুখ্য।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যেন আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথে হাঁটছি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদও সংকট সমাধানে সর্বদলীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “জাতীয় ঐক্য ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।”
এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, তিনি দায়িত্বে থেকে সমঝোতার পথ বেছে নিতে পারেন, আবার কেউ মনে করেন—তিনি পদত্যাগ করে পুরোনো বেসরকারি জীবনে ফিরে যাবেন। অতীতে তার দল গঠন ও বিলুপ্তির নজির রয়েছে, ফলে তার সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত।
সরকারে থাকা কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। এনসিপি সরাসরি তিনজন উপদেষ্টাকে—ড. সালেহউদ্দিন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. আসিফ নজরুল—অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে। বিএনপিও সরকারের মধ্যে থাকা এনসিপি-ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের, বিশেষ করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে সরানোর দাবি তুলেছে।
এই রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যেও দেশের সাধারণ মানুষ একটিই প্রত্যাশা করছে—একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। বিএনপি এরই মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এবং স্পষ্ট করে দিয়েছে—সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন নির্ভর করছে নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রমের ওপর।
এই বাস্তবতায় ড. ইউনূসের সামনে এখন দুটি পথ—এক, অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের নেতৃত্ব দেওয়া; দুই, পদত্যাগ করে সংকট সমাধানের পথ খুলে দেওয়া। এখন দেখার বিষয়—তিনি কোন পথ বেছে নেন।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com