[ad_1]
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চেড়াঘাট গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাতগম্বুজ মসজিদ—মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। প্রায় ১৬১ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করছে।
নৌখালের কোল ঘেঁষে, ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদের পেছনে রয়েছে একটি পুকুর, যা যেন অতীত ও বর্তমানের জলছবি হয়ে আছে। প্রবেশদ্বারে স্থাপিত নামফলকে লেখা রয়েছে বাংলা ১২৬৯ সাল (ইংরেজি ১৮৬২)—‘কায়েম বিশ্বাস মসজিদ’, যা এর দীর্ঘ ঐতিহ্যের প্রমাণ বহন করে।
স্থানীয়রা মসজিদটিকে ‘কায়েম বিশ্বাস মসজিদ’ নামেই চিনে থাকেন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এর প্রতিষ্ঠাতা কায়েম বিশ্বাস ছিলেন একজন গাঁতিদার ও পরাক্রমশালী ব্যক্তি। জমিদার দুর্গাপদ চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ ও পরবর্তীতে তার মার্জনার শর্তে এই মসজিদ নির্মাণের ঘটনা আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে। ‘কলারোয়া উপজেলার ইতিহাস’ গ্রন্থেও এই কাহিনির উল্লেখ রয়েছে।
সাত গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি চুন-সুরকি ও পাতলা ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত। ১২ শতক জমির ওপর নির্মিত মসজিদটির ছাদ টিকে আছে ১০টি পিলারের ওপর, যার উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। এতে রয়েছে ৭টি দরজা, ৭টি গম্বুজ, ১০টি মিনার এবং প্রতিটি সারিতে ৬০-৬৫ জন মুসল্লির ধারণক্ষমতা। এর স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ মসজিদটির সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, “চেড়াঘাটের সাতগম্বুজ মসজিদটি ১৬১ বছরের পুরনো, এটি অবশ্যই উপমহাদেশের মুসলিম নির্মাণ ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দায়িত্বশীলরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর আবেদন করলে বিভাগীয় পর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রাচীন নিদর্শন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রুহুল বিশ্বাস জানান, “মসজিদটির প্রবেশমুখ ইতোমধ্যেই কিছুটা সম্প্রসারিত হয়েছে, যা ব্যবহারের সুবিধা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। এটি কেবল একটি মসজিদ নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এর টেকসই সংরক্ষণ সম্ভব নয়। দেয়ালের গাঁথুনি ও বিভিন্ন অংশ খসে পড়ছিল—কোনোরকমে রং করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।”
মসজিদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই মসজিদ দেখতে আসে। এটি পর্যটনের একটি সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হতে পারে। পাশেই রয়েছে নৌখাল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তবে একে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।”
মসজিদকে ঘিরে ঐতিহ্য সংরক্ষণ, ইসলামী ঐতিহ্য চর্চা এবং পর্যটন সচেতনতা—এই তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
চেড়াঘাটের সাতগম্বুজ মসজিদ কেবল একটি স্থাপনা নয়, এটি শতাধিক বছরের এক জীবন্ত ইতিহাস। কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের মানুষ এই ইতিহাসকে আজও হৃদয়ে ধারণ করে আছে। তবে এই ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ পরিকল্পনা এবং স্থানীয় উদ্যোগের সম্মিলিত প্রয়াস।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com