তিনি বিআরটিএ’র সর্দার; গড়েছেন অঢেল সম্পদ

Reporter Name / ৪৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫


সরকারি চাকরিজীবনের শুরুতে মাত্র দেড় হাজার টাকা বেতন পেতেন। সময়ের ব্যবধানে পদোন্নতি পেয়ে এখন উপপরিচালক (অর্থ) হিসেবে মাসিক বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। অথচ ঢাকায় বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, প্রাইভেটকার- এমনকি গোপালগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ১৪ তলা ভবন! বলছিলাম- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর উপপরিচালক (অর্থ) সরদার মাহবুবুর রহমান।

এই সরকারি কর্মকর্তার ১৯৯২ সালে বিআরটিএ’র ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।দুই ধাপ পদোন্নতি পেয়ে ২০২৩ সালে উপপরিচালক (অর্থ) হন তিনি। এখন তাঁর বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিন দশকের চাকরিজীবনে তাঁর সর্বমোট বৈধ আয় হিসেবে ধরা হয় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।

ঢাকা উদ্যানের ব্লক-এ, রোড- ২, বাড়ি নম্বর-২১ এই ঠিকানার বহুতল ভবনটি বর্তমানে সাড়ে আটতলা বিশিষ্ট। নিচতলায় রয়েছে তিনটি দোকানঘর। ভাড়াটিয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে ৭-৮ বছর আগে। মাহবুবুর রহমান সেখানে কখনোই বাস করেননি। প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। সব ক’টিতে ভাড়াটিয়া রয়েছে।

এছাড়া গোপালগঞ্জ শহরের থানাপাড়া মসজিদের পাশে ২০১৪ সালে স্ত্রী মিন্নি বেগমের নামে ৬৫ লাখ টাকায় সাড়ে ৬ শতাংশ জমি কিনেন। বছর দুই আগে সেই জমিতে ১৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে নয় তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভবনের প্রতিটি তলায় তিনটি করে ইউনিট।

নির্মাণ শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, ভবনটির নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২,৩০০ টাকা। নির্মাণের সামগ্রিক ব্যয় দাঁড়াবে কয়েক কোটি টাকা। অথচ মাহাবুবের পরিবারের অতীত আর্থিক অবস্থা ছিল সীমিত। পৈতৃক সম্পদ বা শ্বশুরবাড়ির দিক থেকেও এই ধরনের ব্যয়ের ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।

বিআরটিএর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন জেলার অফিসে বাজেট বরাদ্দ নির্ধারণ করতেন এককভাবে মাহাবুবুর রহমান। এই সুযোগে বাজেট বাড়িয়ে দিয়ে সার্কেল অফিসগুলো থেকে নিতেন মোটা অঙ্কের কমিশন। কেনাকাটার ভাউচার পাস করাতেও উৎকোচ দিতে হতো বলে জানা যায়। বেসরকারি ভেন্ডরদের বিল পাসের ক্ষেত্রেও অনিয়ম ছিল নিয়মিত ঘটনা। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর ক্ষমতা খর্ব হয়েছে।

মাহাবুবের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে। স্থানীয়দের মতে, তাঁর প্রয়াত বাবা ছিলেন একজন কৃষক। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কিছু আবাদি জমি এখনো বিক্রি হয়নি। সেখানে তাদের পৈত্রিক একটি টিনের বাড়ি ছিল। সেটি ভেঙে এখন একতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

তাঁর স্ত্রী গৃহিণী, সন্তানরা এখনো শিক্ষার্থী। শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অবস্থাও ছিল সীমিত। শ্বশুর মোহাম্মদ আলী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য।

তিনি বিআরটিএ’র সর্দার; গড়েছেন অঢেল সম্পদ
তিনি বিআরটিএ’র সর্দার; গড়েছেন অঢেল সম্পদ

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুবুর রহমান একসময় মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের ১৯/সি-২ নম্বর ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ভবনের কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, একই হোল্ডিংয়ে পাশাপাশি দুটি ছয়তলা ভবন। প্রথম ভবনের ৩/এ ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুবুর রহমান। ফ্ল্যাটের আয়তন আনুমানিক ১২০০ বর্গফুট। ২০১০ সালে ভবন নির্মিত হয়। ওই সময়ই ফ্ল্যাটটি কেনেন মাহাবুব। সেখানেই বসবাস করতেন। তবে প্রায় ১০ বছর আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে উত্তরায় চলে যান। বর্তমানে ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাটে থাকেন।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি’র ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ি, দেশে যে কয়েকটি সেবা খাত রয়েছে তার মধ্যে বিআরটিএ দুর্নীতিগ্রস্থদের শীর্ষে রয়েছে। ওই সময়ে বিআরটিএতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৮৬ শতাংশ, আর প্রতিষ্ঠানটিতে ঘুষ দিতে হয়েছে ৭১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের সময় বিআরটিএতে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট ছিলো, সেখানে সরদার মাহাবুবুর রহমানও ছিলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠলেও তারা ছিলেন ধরাছোয়ার বাইরে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা এক অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, মাহাবুবুর রহমানের যেসব সম্পদ প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো মূলত অবৈধ আয়ের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সরদার মাহাবুবুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/