বিশ্বখ্যাত তথ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স তথা স্টারলিংক এখন বাংলাদেশের আকাশপথে। উপগ্রহের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কোম্পানিটি। এমন কি যেখানে মোবাইল টাওয়ারের সংকেত কখনও পৌঁছায়নি, সেখানেও।
প্রযুক্তিগত এই বিপ্লব দেশে বিদ্যমান মোবাইল অপারেটরদের জন্য আশীর্বাদ, না কি শেষ হতে চলেছে তাদের স্বেচ্চাচারিতা- সে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর রয়েছে- গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। এরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের টেলিকম খাতে আধিপত্য করে আসছে। যদিও দেশের বড় একটি অংশ এবং সেখানকার জনগোষ্ঠী এখনো তাদের নেটওয়ার্কের বাইরে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল।
স্টারলিংক এসেছে ভিন্ন পথে। এটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি ব্যবহারকারীর বাসায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়, টাওয়ার বা কেবল ছাড়াই। শুধু তাই না, সাধারণ মোবাইল নেটওয়ার্ক যেখানে পৌছাতে পারেনি, সেখানেও। তাদের ভাষায়, দুর্গম পাহাড় থেকে পানির গভীরে সর্বত্রই বিরাজমান স্টারলিংক।
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহজলভ্যতা এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট যদি প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে গ্রাহকের হাতে আসে, তবে প্রচলিত মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্য সৃষ্টি হতে পারে একাধিক ঝুঁকি।
প্রথম ও সবচেয়ে বড় ঝুঁকি, গ্রাহক হারানো। বিশেষ করে দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলে, যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, স্টারলিংক হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প। শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার বা ব্যবসায়ী যারা নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট চান, তারা মোবাইল অপারেটর ছেড়ে স্টারলিংকের দিকে ঝুঁকতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান ব্যবসায়িক মডেল, যা ভয়েস কল ও মোবাইল ডেটা বিক্রয়ের ওপর নির্ভর করে, সেটি ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ স্টারলিংকের মাধ্যমে শুধু ডেটাই নয়, ভয়েস কলও করা সম্ভব হবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এতে কমে যেতে পারে অপারেটরদের আয়।
তৃতীয়ত, টিকে থাকার জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোকে করতে হবে বড় প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ। ৫-জি সম্প্রসারণ, ক্লাউড প্রযুক্তি এবং নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক বাড়ানোর প্রয়োজন হবে, যার জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ।
চতুর্থ ঝুঁকি হলো, গ্রাহকের প্রত্যাশা। স্টারলিংক যদি স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট দিতে পারে, তাহলে গ্রাহকেরা একই মানের পরিষেবা প্রত্যাশা করবেন মোবাইল অপারেটরদের কাছেও। অথচ সেটি দেওয়া কঠিন হবে বিদ্যমান পরিকাঠামো দিয়ে।
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মানুষ বিদ্যমান মোবাইল কোম্পানিগুলোর কলরেট ও ইন্টারনেটরেট এবং মেয়াদ দিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলো। যদিও তাতে কখনোই কর্ণপাত করেননি তারা। স্টার লিংকের আগমন কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা কিছুটা হলেও কমাবে- এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২০ মে থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা প্রদান শুরু করেছে স্টারলিংক। আপাতত ব্যবহারকারীরা শুধু ‘রেসিডেনশিয়াল’ অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। অর্ডার দেওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পুরো সেট গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। এবং এটি ব্যবহারকারী নিজেই সহজে সেটআপ করতে পারবেন।
একটি স্টারলিংক ডিভাইসের সেটআপ সরঞ্জামের জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। ‘স্টারলিংক রেসিডেন্স’ এ মাসিক খরচ হবে ৬ হাজার টাকা এবং ‘রেসিডেন্স লাইট’, যার খরচ ৪ হাজার ২০০ টাকা।
এখানে একটি সম্ভবনা রয়েছে দেশীয় কোম্পানীগুলোর। অনেকেই মনে করছেন, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারনে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারিরা বিদ্যমান অপারেটরেই থেকে যাবে।
তবে এক্ষেত্রেও বিকল্প রয়েছে স্টার লিংকের। একটি ডিভাইসের মাধ্যমে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। আর গ্রামীণ এলাকায় তা হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত। একজন ব্যবহারকারী বা সমিতি গঠনের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি মিলে এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান অপারেটরের চেয়েও কমমূল্যে সেবা দিতে পারবে স্টারলিংক।
স্টারলিংক তাদের উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে, দুর্গম অঞ্চল বা যেখানে সাধারণ ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারে না, সেসব এলাকায় স্টারলিংক সহজেই পৌছে যেতে পারে। সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতির সীমাহীন ইন্টারনেট পাওয়া যাবে এই সেবায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও স্টারলিংক ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ভুটান ও শ্রীলঙ্কায়।
https://slotbet.online/