ববিতে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় বাজেট নেই

Reporter Name / ৪৪ Time View
Update : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫


পর্যাপ্ত গবেষণা পরিবেশ, অবকাঠামো ও গবেষণা সামগ্রীর অভাব এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় গবেষণা কার্যক্রমে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ না থাকায় তাদের গবেষণা কার্যক্রমে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের জন্য গবেষণা বাজেট থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী থিসিসের জন্য এগিয়ে এলেও অর্থের অভাবে মাঝপথেই অনেকেই গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হন। এতে মানসম্মত থিসিস উপস্থাপন করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিয়মিত শিক্ষকদের গবেষণার জন্য এক কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। পাশাপাশি পিএইচডি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ টাকা, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কার্যক্রম না থাকায় এ অর্থ অব্যবহৃত থেকে যায়। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো বাজেট রাখা হয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রজেক্ট বা থিসিসের কাজের সময় প্রায়ই আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়। নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

তাদের ভাষ্য মতে, অনেক সময় কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা শুরু করলেও অর্থ সংকটে কাজ শেষ করতে পারেন না। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, জরিপ পরিচালনা কিংবা গবেষণা প্রকাশে অর্থের অভাবে বাধা সৃষ্টি হয়। এসব ব্যয় তাদের নিজেদের পকেট থেকেই বহন করতে হয়, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না।

মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গবেষণা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা আমাদের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক সময় গবেষণার কাজে গিয়ে আমরা আর্থিক সংকটে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করে, তবে গবেষণার কাজটি অনেক সহজ হবে।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করতে হবে এবং তাদের আর্থিক প্রেষণা দিতে হবে। শুধুমাত্র শিক্ষকদের গবেষণায় নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে কখনও একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলা হলেও বাজেট বরাদ্দ হয়নি। আমরা যারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা করি, অনেক সময় সেই অর্থ আমাদেরই জোগাড় করতে হয়, যা অত্যন্ত কঠিন।’

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন, সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা বাজেট নেই, যা গবেষণা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। যারা থিসিস করেন, তারা এনএসটি ফান্ড থেকে কিছুটা সাহায্য পান। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সহায়তা পেলে তারা আরও উপকৃত হবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. তৌফিক আলম বলেন, ‘গবেষণার মান যেন বাড়ানো যায়, সেজন্য গবেষণার সার্বিক বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড এবং বাইরের উৎস থেকেও বাজেট কীভাবে আনা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেন্ট্রাল ল্যাবে যেসব যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, সেগুলো মেরামতের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/