“চিকেন নেক” বলতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিলিগুড়ির এক সংকীর্ণ করিডোরকে বোঝানো হয়। যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা থামছেই না। এই করিডোর ভারতের মূল ভূখণ্ড উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
প্রায় ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডোরের চারপাশে রয়েছে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। আর এ কারণেই দিল্লি সবসময় এই করিডোর নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকে।
বাংলাদেশেও রয়েছে এমন দুটি করিডোর। প্রতিবেশি ভারতের কারণে এই করিডোর নিয়ে বাংলাদেশও চিন্তিত। বাংলাদেশের মানচিত্রে তাকালেই চোখে পড়বে এই অদ্ভুত ভৌগলিক বাস্তবতা।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এই সংকীর্ণ করিডোর দুটির অবস্থান। যার মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। এই করিডোর দুটি শুধু একটি ভূখণ্ডগত বিষয় নয়। দিনকে দিন এই করিডোর দুটি বাংলােেশর জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সংহতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক জটিল নাট্যমঞ্চ হয়ে উঠছে।
উত্তরের করিডোরটি দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় পর্যন্ত। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সরু পথ রয়েছে, যার দুই পাশে ভারতীয় ভূখণ্ড।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডোরে যেকোনো ধরনের বিঘ্ন মানেই, রংপুর বিভাগ পুরোপুরি বিচ্ছিন হয়ে পড়বে বাংলাদেশের বাকি অংশথেকে। অর্থাৎ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী বা পঞ্চগড়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না।
এই করিডোর ঘেঁষে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় রাজ্যের অংশ। এই অঞ্চলটি ভূরাজনৈতিকভাবে অতি সংবেদনশীল। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় সীমান্ত উত্তেজনা, চোরাচালান, এমনকি বিচ্ছিনতাবাদী গোষ্ঠীর গতিবিধি।
ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এবং বাংলােেশর সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) নিয়মিত টহল দিয়ে থাকলেও এই করিডোরের নিরাপত্তা সর্বদা ঝুঁকিতে।
.
অন্যদিকে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রয়েছে আরও একটি “চিকেন নেক”। এই করিডোরটির দৈর্ঘ্য মাত্র ২৮ কিলোমিটার। এর এক পাশে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা, অপর পাশে বঙ্গোপসাগর। এই করিডোরের ভেতর দিয়েই চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল সংযুক্ত বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বাংলােেশর অর্থনীতির হৃস্পন্দন। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এখানে অবস্থিত, যা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি হয়। যদি এই ২৮ কিলোমিটার করিডোরে কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তাহলে চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে তা হবে মারাত্মক ধাক্কা।
গত ২৫ মে ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশের এই করিডোর দুটি নিয়ে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা ভারতকে চিকেন নেক করিডোর নিয়ে হুমকি দেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে, বাংলাদেশেও এমন করিডোর রয়েছে।’
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। এটি বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা। এর মধ্যে আছে আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার, ত্রিপুরা ৮৫৬ কিলোমিটার, মিজোরাম ১৮০ কিলোমিটার, মেঘালয় ৪৪৩ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার বিস্তৃত।
সীমানার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভাগগুলোর সীমান্ত ভাগাভাগি রয়েছে সেগুলো মধ্যে আছে ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট এবং চট্টগ্রাম। দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে কতগুলো থাম দিয়ে মার্কা করা আছে। কিছু সীমা নির্ধারণ করার স্থানে দু-দিক থেকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে।
https://slotbet.online/