মোংলা বন্দরে সাজানো ডাকাতির নাটক

Reporter Name / ৫৭ Time View
Update : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫


মোংলা বন্দরে নোঙর করা একটি বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন। তাদের সজাগ তৎপরতায় উদ্ধার হয়েছে চুরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, আটক করা হয়েছে তিনজন জড়িত ব্যক্তিকে।

২৮ মে (বুধবার) দুপুরে মোংলা বন্দরের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান এবং উর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, ২৬ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মোংলা পোর্ট সংলগ্ন বেইস ক্রিক এলাকায় নোঙর করা এমভি সেঁজুতি নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজে ১২ জনের একটি ডাকাতদল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে মূল্যবান যন্ত্রাংশ লুট করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরপরই কোস্ট গার্ড তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তথ্য ও নাবিকদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ২৭ মে মোংলা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ইঞ্জিনের স্পেয়ার পার্টস, বিভিন্ন সাইজের বিয়ারিং, ব্যাটারি, চার্জারসহ চুরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ উদ্ধার এবং তিনজন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়।

তবে তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিকভাবে ডাকাতি মনে হলেও, জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়ে—ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং সাজানো। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় জাহাজের নাবিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধে। সেই সুযোগে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও স্থানীয় অপরাধীদের সহায়তায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে মালামাল বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক লাভের পরিকল্পনা করা হয়।

আটককৃত ব্যক্তিরা স্বীকার করেছে যে, তারা জাহাজের অভ্যন্তরের কিছু লোকের সহযোগিতায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মালামাল বিক্রির পর লাভ ভাগাভাগির পরিকল্পনাও ছিল তাদের। অথচ জাহাজের মালিক পক্ষের ক্যাপ্টেন সাহিকুল সাহেব ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি অজুহাত দেখিয়ে উপস্থিত হননি।

বর্তমানে উদ্ধারকৃত মালামাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান এবং আটক ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

তারা আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ ফেলে রাখা এবং নাবিকদের বেতন না দেওয়ার পেছনে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য আছে কিনা, সে বিষয়েও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি, এই সাজানো ঘটনার আড়ালে আসল তথ্য গোপন করে সংবাদপত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জানমালের সুরক্ষায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/