বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদান অনন্য উচ্চতায়

Reporter Name / ৩০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫


বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অব্যাহত সাহস, আত্মত্যাগ ও পেশাদারিত্বের জন্য আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে—ইরান-ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে।

চার দশক পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। এ পর্যন্ত ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১০টি দেশে ৫ হাজার ৮১৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৪৪৪ জন নারী—এটি নারীর অংশগ্রহণে বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।

২৯ মে, বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য—“শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ”। দিবসটি ঘিরে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রতিকূল ও সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে অসীম সাহস, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তারা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে করেছে উজ্জ্বল ও মর্যাদাসম্পন্ন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও দিবসটি উপলক্ষে শান্তিরক্ষীদের অবদানের প্রশংসা করে এক বাণী দিয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিবসটি পালিত হয়। এ বছর বাংলাদেশেও দিনব্যাপী নানা আয়োজনে শান্তিরক্ষীদের স্মরণ ও সম্মান জানানো হচ্ছে।

দিবসের শুরুতে আয়োজিত হয় ‘শান্তিরক্ষী দৌড়’ প্রতিযোগিতা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এই পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর আহত দুই শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

দিবসটি উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মারক জার্নাল, যাতে তুলে ধরা হয়েছে শান্তিরক্ষীদের বীরত্ব, সাফল্য ও মানবিক অবদান।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদচারণা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর ২১ হাজার ৮১৫ জন সদস্য ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ২৪ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় মোট ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য—এর মধ্যে ১২৮ জন পুরুষ ও ৭১ জন নারী—শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা শুধু কূটনৈতিক সফলতাই নয়, বিশ্বজুড়ে শান্তি ও মানবিক সহায়তায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসেবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/