কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, রণক্ষেত্র গাজীপুর

Reporter Name / ২৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫


গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুর নতুন বাজার এলাকায় জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় ছাদ থেকে লাফিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের কারণেই ওই শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। এর জেরে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় পুরো এলাকা।

ঘটনার সূত্র ধরে মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়া, পুলিশের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান নেন এবং কারখানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। তবে এর আগেই, সোমবার রাত থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। উত্তেজিত শ্রমিকেরা পুলিশের একটি এপিসি (আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়িতে ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ছুটি চাইতে গেলে কর্তৃপক্ষ জাকির হোসেন নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। অপমান সইতে না পেরে তিনি ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা এর প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হলে পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকেরা। এতে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন।

ভবনের ৮ তলা থেকে লাফিয়ে মারা যাওয়া মো. জাকির হোসেন (২৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরের জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডে কাজ করতেন।

আল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, “জাকির হোসেন ছুটি চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দুর্ব্যবহার করে। এ কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।” তবে তিনি জানাতে পারেননি, জাকির কোন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইতে গিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, পারিবারিক কলহের কারণে জাকির হতাশ ছিলেন। ছাদে হাঁটার সময় অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কারখানার এজিএম জুবায়ের এম বাশার বলেন, “ছুটি চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শ্রমিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরেছি।”

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক গণমাধ্যমকে বলেন, “সকাল থেকেই পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এতে ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। কতজন শ্রমিক আটক হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিল্প পুলিশের একটি এপিসিও ভাঙচুর করেছেন।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/