রাজধানীর আদাবরে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিদ্যুতের ‘মিটার কেলেঙ্কারি’র ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা ধরনের তৎপরতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে একের পর এক কৌশর নিচ্ছে সংঘবদ্ধ এই চক্রটি।
আর এ ঘটনায় সরাসরিভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ডিপিডিসির শ্যামলি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম ও আদাবর এনওসিএসর নির্বাহী প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আয়াতুল্লাহ ইমরান আলীর বিরুদ্ধে।
ঘটনার সুত্রপাত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা অ্যাফেয়ার্সের এক অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, আদাবর এনওসিএসয়ের অধীন ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকায় অনুমোদিত মিটার অপসারণ করে অন্য আরেকটি স্থাপনায় অবৈধ সংযোগ দেয়ার তথ্য পায় বাংলা অ্যাফেয়ার্স।
তরিকুল-ইমরান সিন্ডিকেটের কয়েকজন মিটার রিডার ও লাইনম্যান সরাসরি এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ যাচাই করতে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকায় অনুসন্ধান চালায় বাংলা অ্যাফেয়ার্স।
অনুসন্ধানকালে, আদাবর এনওসিএস এর ঢাকা উদ্যান ফিডারের নবীনগর হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি উচ্চচাপ (এইচটি) সংযোগ থাকা সত্ত্বেও ভবনটির নিচতলার একটি দোকানে আরেকটি অবৈধ সংযোগে প্রমাণ পাওয়া যায়।
স্থানীয় অন্যান্য দোকান মালিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযাগ, প্রকৌশলী ইমরান আলীর সিন্ডিকেটের ক্যাডার মিটার রিডার ইলিয়াসের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন মিটার রিডার ও লাইনম্যান ওই দোকানসহ আশেপাশের এলাকায় এমন অনেক অবৈধ সংযোগ দেয়ার মত অপরাধে জড়িত।
কোন প্রকার ডিমান্ডনোট ও ব্যবহার রিডিং গ্রহণ ছাড়াই এককালিন কয়েক লাখ টাকা ঘুষ এবং মাসিক নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এসব সংযোগ দেয়া হয়। এসব অবৈধ সংযোগ প্রধানের ক্ষেত্রে এককালিন নেয়া লক্ষাধিক টাকা পৌছে দেয়া হয় নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান আলীকে। আর সেই অর্থের একটি অংশ আবার ইমরান আলী পৌছে দেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামকে। আর এসব অবৈধ সংযোগের নির্ধারিত বিলের ৫০ শতাংশও দিতে হয় তরিকুল-ইমরান জুটিকে।
স্থানীয় গ্রাহকদের এমন অভিযোগের প্রমাণ ওই দিনই (৩০ এপ্রিল) পাওয়া যায় ইমরান আলীর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের অনুসন্ধানের খবর আচ করতে পেরে তড়িঘড়ি করে ওই দিনই উল্লেখিত দোকানের অবৈধ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে মিটারটি খুলে নিয়ে যান ইমরান আলী।
আইনগত ‘এখতিয়ার’ বা ‘ক্ষমতা’ আছে এমন দাবিতে মিটারটি বিচ্ছিন্ন করলেও, মিটারটি টেস্টিং পাঠানো, অবৈধ সংযোগের সুবিধা নেয়া গ্রাহককে তলব, অবৈধ সংযোগ সম্পর্কে অবগত থাকলেও কর্তৃপক্ষকে না জানার অপরাধে সংশ্লিষ্ট এলাকার মিটার রিডারকে শোকজ ও সাময়িক বহিষ্কারের আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলে তা এড়িয়ে যান ইমরান।
উল্লেখ্য বিদ্যুৎ আইন-২০১৮ এর ২- ধারা উপধারা-১২তে ‘যেকোনো উপায়ে অবৈধভাগে বিদ্যুতের সংযোগ গ্রহণ করে তা ব্যবহার সুবিধা নেয়াকে ‘বিদ্যুৎ চুরি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে।
আইনের ৩২ ধারার ১ ও ২ উপধারা এবং ৩৩ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বিদ্যুৎ চুরি’কে দণ্ডনীয় ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এই অপরাধের শাস্তি বিধান নির্ধারণ করা হয়। আইনের ৪১ ধারায় বিদ্যুৎ চুরি মত অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা, ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনা দেয়াকেও ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান নির্ধারণ করা হয়ে। আর আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়ে, বিদ্যুৎ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত সরকারি, বেসরকারি বা কোনো ঠিকাদারি কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারি যদি কোনো প্রকার বিদ্যৎ চুরি সম্পর্কে অবগত থাকার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঘটনাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানায় তাহলে ওই সব কর্মকর্তা ও কর্মচারি ৪১ ধারায় সহায়তাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত ও নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সেক্ষেত্রে আদাবরের নবীনগর হাউজিংয়ের ওই স্থাপনার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পাওয়া গ্রাহক বিদ্যুৎ চুরির অপরাধে এবং ওই এলাকায় বা স্থাপনার বিদ্যুতের বিল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা মিটার রিডার, অবৈধ সংযোগ দেখার পরও কর্তৃপক্ষ না জানানোর জন্য সহয়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত হবে।
অন্যদিকে এই আইনের ১৭ ধারা ২ ও ৩ ধারা অনুযায়ি মিটার অনুমোদন, স্থাপন ও সুরক্ষার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিতরণকারী সংস্থার অনুমোদিত মিটার সুরক্ষার দায়িত্ব অনুমোদিত গ্রাহকের উপর বর্তাবে। একই সঙ্গে স্থাপিত মিটারটি বিতরণকারী সংস্থার অনুমতি ব্যতীত বিদ্যুতের বিতরণ লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন, মিটার টেম্পারিং, স্থাপিত স্থান থেকে অপসারণ করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এই অপরাধে দায়ে অনুমোদিত গ্রাহককেই অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
আইনের এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও নবীনগর থেকে অবৈধ সংযোগে ব্যবহার করা মিটারটির অনুমোদিত গ্রাহককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উদ্যোগই নেননি ডিপিডিসির আদাবর এনওসিএস কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য গ্রাহকের অনুকূলে অনুমোদিত ও স্থাপিত কোনো মিটার কোনো কারণ বিচ্ছিন্ন হলে বা চুরি কিংবা অপসারণের ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় জিডি করাসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ অবগত করা বিধান রয়েছে। আর গ্রাহক যদি এমন ঘটনায় সংস্থাকে অবগত না করেন তাহলে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এই অপরাধে অপরাধী বা সহয়তাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হবে। একই সঙ্গে অনুমোদিত মিটারটি নির্ধারিত স্থানে না থাকার বিষয়টি ওই এলাকার বা স্থাপনার বিদুৎ বিল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা মিটার রিডার অবগত থাকলে কর্তৃপক্ষকে না জানানোর জন্য একই ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। তবে এক্ষেত্রে আইনী বাধ্যকতার ধার ধারেননি ইমরান আলী।
আইন অনুযায়ি প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নির্বাহী প্রকৌশলী তার অধিনস্ত এই দুই মিটার রিডারকে সহায়তাকারী হিসেবে ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত থাকায় তাদের শোকজ ও সাময়িক বরখাস্ত করার আইনী বাধ্যবাধকতাও প্রতিপালন করেননি এসই তরিকুল ও এক্সইন ইমরান আলী কেউই। সার্বিকভাবে এমন অপরাধের ঘটনা সম্পর্কে অবগত কিংবা জড়িত ছিল কিনা তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট বিল সুপারভাইজার, মিটার রিডার কো-অর্ডিনেটর এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সিএসএস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ এখতিয়ার থাকলে তা এড়িয়ে যান ইমরান-তরিকুল জুটি।
নবীনগরে ওই বিদ্যুৎ চুরি ঘটনায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকা ও অপরাধীদের বাঁচাতে ইমরান আলীর তোড়জোড় সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ৩০ এপ্রিল রাতেই বাংলা অ্যাফেয়ার্স ডটকমে প্রকাশিত। এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিন (পরবর্তী কর্মদিবস) উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে নিজের অনুগত এক সহকারী প্রকৌশলীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইমরান। তবে ইমরানের এমন হটকারী ও আইন বহির্ভূত তদন্ত কমিটি গঠনের এক দিন পর, ইমরানের এমন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে নিজে ও ইমরানসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের বাচাতে নতুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম। কোনো প্রকার অফিস আদেশ জারি না করে শুধু মাত্র মৌখিক আদেশেই ইমরানের গঠিত তদন্ত কমিটি বাতিল করে দেন তরিকুল।
শ্যামলী এনওসিএস এর নির্বাহী প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. হাসান শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যে কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য সময়সীমা বেধে দেন তরিকুল।
আর এই কমিটি গঠনের পরপরই অপরাধটি ধামাচাপা ও মিডিয়ার নজর আড়াল করতে আইন ভাঙার ‘খেলায়’ মেতে ওঠেন তরিকুল-ইমরান জুটি। জুন ক্লোজিং, সরকারি ছুটি, প্রধান দপ্তরে মিটিংসহ নানা অজুহাতে দিনের পর দিন সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন তরিকুল ও ইমরান জুটি। তদন্ত কমিটিকে তাগাদা দেয়ার পরিবর্তে সময়ক্ষেপনের পক্ষে ‘যৌক্তিক’ কারণ দেখাতে থাকেন তারা। অবশেষে গত ২৫ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। তবে প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করে বিদ্যুৎ চুরি এমন ফৌজদারী অপরাধকে ‘সামান্য’ অপরাধ দেখি একজন মিটার রিডার (ইলিয়াস) ও একজন লাইনম্যানকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই মাসের বেতন কর্তনের শাস্তি দেন তরিকুল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদন ও দায়ীদের শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম বাংলা অ্যাফেয়ার্স ডটকমকে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছি। আসলে এমন ছোট-খাট তুচ্ছ অপরাধের কি শাস্তি হতে পারে এমন কোনো ধারা বা ক্লজ আমরা না পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে দুই মাসের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তরিকুল বলেন, অপরাধের যে ধরণ তাতে দোষীদের আরও বেশি শাস্তি দেয়া হয়ে গেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করলে একজন মিটার রিডারে দুই মাসে বেতন কেটে নিলে তার জন্য এটা অনেক বড় কিছুই।
একটি অনুমোদিত মিটার নির্ধারিত স্থান থেকে অপসারণ ও অন্য এক স্থাপনায় অবৈধভাবে সংযোগ কিভাবে দেয় হলো এমন প্রশ্নে তরিকুল ইসলাম বলেন, আদাবর এনওসিএস এলাকায় মোট ৮৫ হাজার গ্রাহক বা মিটার রয়েছে, সেখানে একটা মিটার কিভাবে কি হলে সেটা কি দেখা সম্ভব। তারপরও আমরা জানা মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছি।
তরিকুল ইসলামের এমন বক্তব্যের পরবর্তী বাংলা অ্যাফেয়ার্স ডটকম বিদ্যমান বিদ্যুৎ আইন ও আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারায় এই অপরাধটি বিবেচনা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যে আইনের কথা বলছেন ওই আইনের শাস্তির দেয়ার অধিকার বা এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে আদালতই বিচার করতে পারেন।
তরিকুল ইসলামের এমন উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ি অপরাধীদের বিরুদ্ধে নুন্যতম একজন সহকারী প্রকৌশলীকে বাদি পক্ষ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আবারও ওই ঘটনাটিকে তুচ্ছ, সামান্য প্রমানের চেষ্টা করেন।
এদিকে দুই মিটার রিডারের দুই মাসের বেতন কর্তন ছাড়া আইনগতভাবে অপরাধে বিভিন্ন ধারার বাধ্যবাধক বিধানগুলো সরাসরি এড়িয়ে যান তরিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য নবীনগরের ওই বিচ্ছিন্ন করা মিটারটিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিল জমা ছিল। জমা থাকা এই পরিমান বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ বা জরিমানার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি তরিকুল ইসলাম। অন্যদিকে মিটারটি এলটি-এ১ বা আবাসিক হিসেবে অনুমোদন থাকলে সেটি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন বিল বকেয়া রেখেই ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিপিডিসি’র আদাবর এনওসিএসর এর একটি সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে বাংলা অ্যাফেয়ার্স ডটকমকে বলেন, অভিযুক্ত দুই গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গায়েব করে দিয়েছেন তরিকুল ও ইমরান আলী। একই এই সিন্ডিকেটের দেয়া এমন শত শত অবৈধ সংযোগকে আড়াল করতেই তদন্তে কালক্ষেপন, অভিযুক্ত গ্রাহকদের তলব না করা এমন তদন্ত প্রতিবেদনের ফাইন্ডিংস প্রকাশ না করে অপরাধটি হালকাভাবে উপস্থাপন করেছেন তারিকুল ইসলাম।
আদাবরের এমন এই অবৈধ সংযোগের ঘটনায় আইন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও তাদের বক্তব্য জানতে ডিপিডিসির উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোন ও ওয়াটসঅ্যাপে বার বার কল করলেও তা রিসিভ করেননি দুজনের কেউই। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে ঘটনা উল্লেখ্য করে বার্তা পাঠালেও তাতেও কোনো সাড়া দেননি এই দুই কর্মকর্তা।
নাগরিক সেবা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা শেল্টার অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটেশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. গোলাম হোসেন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত ও সহজ করতে এবং বিদ্যুতের মত জাতীয় সম্পদের সুরক্ষায় বিদ্যুৎ আইন-২০১৮ তে বেশ কয়েকটি প্রতিপালন বাধ্যবাধক ধারা রয়েছ। ওই ধারাগুলোকে সংঘটিত অপরাধ দমনে আইন প্রযোগের বিষয়টি এতোটায় বাধ্যবাধক যে, সেগুলো জামিন অযোগ্য, অআপোষযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা রয়েছে। আর এই আইনটি প্রতিপালনের পুরো দায়ই বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত সরকারের অনুমোদিত সংস্থাগুলোর উপর। কিছু কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে সংস্থা চাইলে পুলিশের সহায়তা চাইতে পারবেন এবং পুলিশ সহায়তা করতে বাধ্য থাকবে। আবার সংস্থা চাইলে তাকে দেয়া ক্ষমতা বলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দণ্ড প্রদান ও জরিমানাও আদায় করবে।
গোলাম হোসেন বলেন, আইনটি এতোটাই শক্তিশালী ও প্রতিপালনের ব্যাপারে জোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে, কোনো ভাবে কোনো অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। উল্টো এড়িয়ে যাওয়া দূরে থাক সময় ক্ষেপন করলেও সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে। আদাবরের ঘটনায় ডিপিডিসির মধ্যে এখন একটি অপরাধে দুষ্টু চক্র চলমান রয়েছে। এখন যদি এই দুষ্টু চক্র রোধ না করা হয়, তাহলে আমি মনে করে সংস্থাটির হাতে বিদ্যুৎ বিতরণের মত এমন গুরু দায়িত্বও নিরাপদ নয়। একটা বৈধ মিটার একটা নির্ধারিত স্থান থেকে গায়েব, এটা কি কেউ জানে বা দেখেনি সেটা কিভাবে বলা সম্ভব! ওই মিটারটির কাছে প্রতি মাসে একবার একজন মিটার রিডার যাওয়ার কথা, তাহলে সে কি যাচ্ছে না। সে কি দেখেনি। অন্যদিকে যে গ্রাহকের নামে মিটারটি অনুমোদন দেয়া, তার স্থাপনা থেকে তার সহযোগীতা ছাড়া মিটারটি উদাও হয়ে গেছে আর সে নিজেও জানে না। এতোগুলো ইউনিট বিল জমা হয়ে আছ তার কি কোনো বিলের রশিদও তার কাছে যায় না। যদি যেত তাহলে তো আর বিল বকেয়া থাকে না। যেহেতু মিটারেই সেখানে নেই তাহলে গ্রাহক তো আগে নিজে বাচার জন্য হলে ঘটনাটি কর্তৃপক্ষকে জানাবে।
তিনি বলেন, আদাবরের ঘটনায় একটা অপরাধকে ঢাকতে আইন অমান্য করে বা আইনের প্রতিপালনযোগ্য ধারাগুলোকে পাশ কাটিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া ও শাস্তি প্রদান করে তদন্ত কমিটি ও শাস্তি প্রদান করা কর্তৃপক্ষ দুজনই একই আইনের আওতায় আরেকটি ফৌজদারী অপরাধ করেছেন। কারণ আইনটি স্পষ্ট বলা হয়েছে, অপরাধ সংঘটিত হয়েছে জানার বা অবগত হওয়ার পর তা এড়িয়ে যাওয়া, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করা, অপরাধের সঠিক বর্ণনা না করে ও দায়ীদের অভিযুক্ত না করে সুরক্ষা দেয়াটাও আইনের ৪৩ ধারায় অপরাধী এবং ৪১ ধারায় বর্ণিত সহায়তাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তাদেরকেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গোলাম হোসেন বলেন, এখন দেখার বিষয়, আইন অমান্য করার এই ধারা ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ আরও কি বয়ে নিতে চান নাকি এখানেই থামতে চান। নতুন যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই কমিটি দায়িত্ব থাকবে বৈধ মিটারটি অপসারণের পর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে কে কে জড়িত কিভাবে জড়িত তা বের করা। একই সঙ্গে আগের কমিটি তদন্তকালে আইনের ধারাগুলো ঠিকঠাক প্রতিপালন করেছে কিনা, না করলে ওই কমিটির এমন কর্মকাণ্ডে ব্যাপারে এই কমিটিকে তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে শাস্তি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষও কিসের ভিত্তিতে কোন অপরাধে কি শাস্তি দিয়েছেন সে সম্পর্কে চলমান তদন্ত কমিটিকে অনুসন্ধান করতে হবে। একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, শাস্তি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ (এসই) কিভাবে কোন আইনের ভিত্তিতে সিএসএস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে শাস্তি দিলেন, যেখানে অভিযুক্ত মিটার রিডার ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই কর্মচারি। ওই অপরাধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও জড়িত কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত না করে তাদেরই পরামর্শে শাস্তি দেয়া আইনের সব চেয়ে বড় বরখেলাপ। এমন অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে অন্তত তাকে শোকজ করা। ৮৫ হাজার মিটারের মধ্যে একটা মিটার কিভাবে কি হলো এটা কি তাদের পক্ষে দেখা সম্ভব এমন বক্তব্য দেয়া ও নিজে দায় নেয়া কর্মকর্তা অধীন একটা কেনো ৮৫ হাজার মিটারই অনিরাপদ।
https://slotbet.online/