[ad_1]
ইরানে চলমান অস্থিরতা ও সংকটের মধ্যে ফের আলোচনায় এসেছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র প্রিন্স রেজা পাহলাভি। ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসা রেজা এবার প্রকাশ্যেই আহ্বান জানিয়েছেন—ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনী যেন ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য পরিত্যাগ করে জনগণের পাশে দাঁড়ায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, রেজা পাহলাভি এই অস্থির পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরতে চাইছেন। বিশেষত ইসরায়েল ও পশ্চিমা শক্তির সহযোগিতা নিয়ে তিনি নতুন একটি ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন, যার কেন্দ্রে থাকবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পতন।
সম্প্রতি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমে রেজার দেওয়া বিবৃতি ও ভাষ্যগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে অনেকেই। তিনি সরাসরি বলেছেন, ইসলামিক রিপাবলিকই ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার মূল উৎস। তাঁর মতে, এটি খামেনি ও ইসলামি সরকারের যুদ্ধ, সাধারণ ইরানিদের যুদ্ধ নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে রেজা পাহলাভির অবস্থান মিল থাকায় পশ্চিমা শক্তিগুলো তাঁকে পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই সমর্থন ভবিষ্যতে সরাসরি হস্তক্ষেপে রূপ নিতে পারে।
রেজা পাহলাভি দাবি করেছেন, তিনি বিদেশি হস্তক্ষেপ চান না। বরং জনগণের বিক্ষোভ, ধর্মঘট ও ভেতরের চাপের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনতে চান। তবে সমালোচকরা বলছেন, বাস্তবে তাঁর কর্মকৌশল ও যোগাযোগ পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপকে বৈধতা দিতে পারে। তাঁরা এটিকে ‘বিদেশিদের মদদে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন।
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য শুধুই ইরানের পরমাণু স্থাপনা নয়—বরং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিও এর উদ্দেশ্য বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েল বিশ্বাস করে, যদি অর্থনৈতিক চাপ ও রাজনৈতিক ক্ষোভের ফলে ইরানিরা রাস্তায় নামে, তাহলে সরকার পতনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আজ চরম বৈরিতা থাকলেও, ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক অতীতে ছিল ঘনিষ্ঠ। ১৯৫০ সালে ইরান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তুরস্কের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। শাহর আমলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল মজবুত। ইরান তেল সরবরাহ করত ইসরায়েলকে, একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস চালু ছিল। তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়। বর্তমান ইরানি সরকার ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং তেহরানে ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের দূতাবাস চালু করে।
অনেক প্রবাসী ইরানি এবং আন্তর্জাতিক মহলের একটি অংশ মনে করেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। অন্যদিকে, অনেকেই রেজা পাহলাভির অতীত পরিচয় ও সাম্রাজ্যবাদী শাসনের স্মৃতি ভুলতে পারেননি। তারা তাঁর নেতৃত্বকে নতুন এক ধরণের স্বৈরতন্ত্রের সূচনা বলে মনে করছেন।
এই মুহূর্তে ইরানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গন্তব্য অনিশ্চিত। রেজা পাহলাভি নেতৃত্বে ফিরতে পারবেন কি না, কিংবা ইরান আরও গভীর সংকটে পড়বে কি না—তা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের দিকনির্দেশনার ওপর।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ফ্রান্স২৪, জিউস নিউজ সিন্ডিকেট, দ্য জিউস ক্রোনিক্যাল, দ্য জেরুজালেম পোস্ট, টাইম
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com