নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার।
প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
“নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।” — বলেন এক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা।
আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
নাফ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ আবুল আলী বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, “এই যে দাঁড়িয়ে আছি, এখানেই আমার ঘর ছিল। পানি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কতবার আর নতুন ঘর তুলব? প্রশাসন শুধু আশ্বাস দেয়, বাস্তবে কিছুই হয়নি।”
একই সুরে কথাগুলো বললেন বৃদ্ধা চলেমা খাতুন। “চুলোয় পানি উঠে ভেঙে গেছে, এখন রান্নাও করতে পারি না। ছেলেমেয়েদের ঈদে কিছু দিতে পারিনি। সাহায্য আসে, কিন্তু আমাদের কাছে পৌঁছায় না।”
প্রায় ৫০০ পরিবার এখনো নদীর ধারে অবস্থান করছে। তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক, ক্ষোভ আর অনিশ্চয়তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এত বড় দুর্যোগেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট আর ভেজা চোখ।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।”
স্থানীয়দের স্মৃতিচারণে উঠে আসে ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারের কথাও, যেখানে দ্বীপের চারটি পাড়ার ঘরবাড়ি ও মসজিদ সাগরে বিলীন হয়েছিল। ইতিহাস যেন আবার নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে।
নাফ নদীর অব্যাহত ভাঙনে জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ—উপড়ে পড়া গাছের গোড়া, নদীতে ঝুলে থাকা ঘরের কাঠামো, কাঁদা ও পানির স্রোতে নিশ্চিহ্ন বসতভিটা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীরদ্বীপের জালিয়া পাড়ার যেসব বাংলাদেশি নাফ নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন, তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
https://slotbet.online/