বর্ষা নামলেই যেন জেগে ওঠে কিশোরগঞ্জের হাওর। প্রকৃতি তার নিঃশব্দ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় এক মোহময় রূপে—নীল আকাশের প্রতিবিম্ব পড়ে স্বচ্ছ জলে, আর সেই জল যেন হয়ে ওঠে প্রাণের আয়না। এমনই এক জাদুকরী সৌন্দর্য এখন মিঠামইন ও বালিখলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
জলরাশির বিস্তারে একেকটি ঢেউ যেন কবিতার মতো ধাক্কা খায় মননে। হাওরের বুকজুড়ে অসীম জল, আর তার উপরে চলমান ট্রলার আর হাসিমুখে ভ্রমণপিয়াসু মানুষের দল—এই দৃশ্য যেন শহরের কোলাহলে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের জন্য পরম প্রশান্তি। ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটক পরিবার নিয়ে ঘুরে গেছেন এই অঞ্চলে। ছুটি শেষ হলেও কমেনি মানুষের ঢল। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে সেই ভিড়।
সোমবার বালিখলা ঘাট আর মিঠামইনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশ। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনের হাত ধরে মানুষ ছুটে এসেছে হাওরের জলরাশিতে একটুখানি শান্তি খুঁজতে। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে সবাই যেন খুঁজছেন জীবনের নতুন অর্থ—জলে ভেসে বেড়ানো নৌকার ছাদে, প্রকৃতির আলো-ছায়ার খেলায়।
২০১৯-২০ সালে নির্মিত মিঠামইন-নিকলী বেড়িবাঁধ আজ হয়ে উঠেছে পর্যটনের কেন্দ্রস্থল। এই বেড়িবাঁধের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হয়—জীবনের ক্লান্তি যেন এখানেই থেমে যায়। বিশেষ করে বর্ষার পানিতে ডুবে থাকা করচগাছের সারি, ছাতিরচরের সবুজ শোভা আর সোনালি রোদে ঝিলমিল হাওরের ঢেউ—সব মিলিয়ে এক অপার্থিব দৃশ্য।
স্থানীয় মাঝি সুমন মিয়ার কণ্ঠে হাসির সুর, “বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই সময়েই আমরা সবচেয়ে ভালো আয় করি। পর্যটকদের ঘুরিয়ে বেড়ানোই আমাদের জীবিকা।”
নরসিংদী থেকে মোটরসাইকেলে আসা ২০ বন্ধুর একটি দল জানায়, হাওরের জলে তারা পেয়েছেন প্রকৃতির সত্যিকারের ছোঁয়া। দলটির একজন সদস্য হাসানুল শুভ বলেন, “জীবনে অনেক জায়গায় গেছি, কিন্তু হাওরের মতো প্রশান্তি আর কোথাও পাইনি।”
প্রতিদিন হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে কেউ হয়তো নিজের ভেতরটা আবিষ্কার করছেন নতুনভাবে। কারণ এই হাওর কেবল একটি জলাভূমি নয়, এটি এক আত্মিক আশ্রয়স্থল—যেখানে প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে বন্ধন গড়ে ওঠে নিরবে।
স্থানীয় প্রশাসনও এই সৌন্দর্যকে রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সদা প্রস্তুত। মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির জানান, জিরো পয়েন্টে পোশাকধারী ও সিভিল পুলিশ মোতায়েন আছে, পাশাপাশি দুটি চেকপোস্টও চালু রয়েছে যেন দর্শনার্থীরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
হাওরের জলে যখন সূর্য ডুবে যায়, তখন তার প্রতিচ্ছবি যেন হৃদয়ের আকাশেও পড়ে। মিঠামইনের হাওর আজ শুধু ভূগোলের নাম নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক নৈসর্গিক আশ্রয়, যে আশ্রয়ে প্রতিটি ক্লান্ত প্রাণ খুঁজে পায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।
https://slotbet.online/