এক সময় বলিবাজার, থানচি বাজার, স্কুল-কলেজ কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে নদী পার হতে হতো নৌকা বা বোটে করে। শহরে পৌঁছাতে সময় লাগত প্রায় এক ঘণ্টা। কিন্তু এখন নবনির্মিত সংযোগ সেতুর মাধ্যমে মাত্র ৮-১০ মিনিটেই মূল শহরে পৌঁছাতে পারছেন মানুষ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু যোগাযোগ, চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। নিয়ম অনুযায়ী এখনো ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকলেও স্থানীয় মানুষ ও ছোট যানবাহনের চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও আনন্দ বিরাজ করছে। এই সেতু বদলে দিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের জীবনযাত্রা।
থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বাজার এলাকায় শঙ্খ নদীর ওপর নির্মিত সংযোগ সেতুটি বদলে দিচ্ছে ১২টি গ্রামের দূর্গম এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের জীবনধারা। পাঁচউবি অর্থায়নে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালে শেষ হয়েছে। শিগগিরই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
নদীর অপর পাড়ে অবস্থিত ১২টি গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ৭ হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই কৃষিজীবী, আগে নদী পার হয়ে বাজারে যেতে হতো। বর্ষায় নদীর পানি বাড়লে পারাপারে ভোগান্তি হতো, নষ্ট হতো কৃষিপণ্য, সময়মতো পাওয়া যেত না চিকিৎসাসেবা। কিন্তু এখন সেতু চালু হওয়ায় এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বলিপাড়া ইউনিয়নের বাজার এলাকায় সাঙ্গু নদীর ওপর ১৮০.৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার ব্রিজ ও ৭০ মিটার আরসিসি রাস্তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে মেজবাহ এন্টারপ্রাইজ, যার মালিক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অমল কান্তি দাশ। প্রকল্পের মূল নকশাকার ছিলেন বোর্ডের সাবেক প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আজিজ।
এই সেতু হওয়ার আগে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নৌকায় পার হতো। এখন সেতুর মাধ্যমে কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করা যাচ্ছে। আর বান্দরবানের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বলিপাড়া সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মিত এই গার্ডার সেতুটি সবচেয়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি।
বলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শৈহ্লা, মংথোয়াই শৈসহ অনেকে বলেন, “ব্রিজটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনবে। এখন কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে, চিকিৎসাসেবা সহজ হবে। আগে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না, এখন দুর্ভোগের অবসান হয়েছে।”
বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা বলেন, “আগে হাজারো মানুষ নৌকা দিয়ে পার হতো। বর্ষায় পানি বেড়ে গেলে চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। এখন ব্রিজ হওয়ায় দ্রুত যাতায়াত করা যাচ্ছে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছির বিন আরাফাত বলেন, “থানচির বলিপাড়া এলাকায় সাঙ্গু নদীর ওপর গার্ডার ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো সময় এটি উদ্বোধন করা হবে। এই সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে।”
https://slotbet.online/