পিরোজপুর পৌরসভায় দুর্নীতির রাজত্ব, উন্নয়ন নেই বছরজুড়ে

Reporter Name / ৫ Time View
Update : রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫


প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়ার পরও পিরোজপুর শহরে নেই কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পৌরসভার রাজস্ব ও তহবিলের অপচয়, দলীয়করণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণেই আজকের এই করুণ অবস্থা।

পিরোজপুর পৌরসভায় তিনবারের মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মালেক। তাঁর মেয়াদকালে পৌরসভার প্রায় সব অর্থ তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তে ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তবে পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মালেকের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সচিব বনি আমিন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা জামাল মিয়া। যাদের একজন ৩৫ বছর এবং আরেকজন ১৩ বছর একই স্থানে কর্মরত আছেন।

মেয়রের অনুপস্থিতে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ অংশ তারাই নিয়ন্ত্রণ করেন। পৌর এলাকায় যেকোনো নতুন ভবনের প্লান পাস করাতে হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জামাল মিয়াকে দিতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন।

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তার কমিশন না পাওয়া পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয় না কোন প্ল্যান। জামাল মিয়া ১৯৯০ সালে পিরোজপুর পৌরসভা যোগদান করেন। দুইবার পোস্টিং হলেও তদবির করে সে পোস্টিং বন্ধ করে প্রায় ৩৫ বছর একই কর্মস্থলে আছেন। মূলত তার নিজ এলাকায় এবং সাজানো রাম রাজত্ব কায়েম করার জন্য তার এই উদ্যোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানিয়েছেন জামাল স্যার অনেক চতুর। মূলত তার দৃশ্যমান তেমন সম্পদ দেখা না গেলেও নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

মেয়র মালেকের আরেক সহযোগী হিসেবে পরিচিত পৌরসভার সচিব বনি আমিন। মুলবাড়ি ভোলা, ২০১২ সাল থেকে পিরোজপুর পৌরসভায় চাকরি করছেন। মাঝে একবার পাশ্ববর্তী জেলা ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় তার বদলি হলেও ক্ষমতা ও বিপুল অর্থ ব্যয় করে সেই পোস্টিং আটকে দেন তিনি। মূলত সাবেক মেয়র মালেকের সাথে সক্ষ্যতা জন্য দীর্ঘদিন পৌরসভার সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘিয়া মৌজায় চার বছর আগে জমি কিনে বাড়ি, নামে বেনামে নগদ অর্থ জমিয়েছেন। মূলত সকল কাজের চেক এবং ভাউচার থেকে তার বেতন বহির্ভূত আয়ের প্রধান উৎস।

অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন মেয়রের ছায়ায় থেকে পৌরসভার উন্নয়ন তহবিল লুটপাটে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এতে একদিকে যেমন পৌর নাগরিকরা মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছেন, অন্যদিকে অন্যায্য উপায়ে গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড়।

স্থানীয়দের দাবি, পৌর মেয়র ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

অভিযোগের বিষয়ে জামাল মিয়া বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, দুইবার পদোন্নতি হয়েছিল; তখন এই পৌরসভায় পদ ফাঁকা থাকায় তিনি পোস্টিং এর জন্য চেষ্টা করেননি। তার ইচ্ছা বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব নেয়ার।

তিনি জানান, প্ল্যান পাশে তার কোন ভূমিকা নেই। তিনি কেবল ‘নোট’ দেন। কমিশন নেয়ার বিষয়টি তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। বেতনের বাইরে তার কোন আয় নেই।
অন্য কর্মকর্তা বনি আমিন বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর দুই দফায় মঠবাড়িয়া পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই পরবর্তীতে সেখানে পোস্টিং দেয়ায় তিনি যোগদান না করে পোস্টিং বাতিল করান। আর দুর্নীতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এর আগে এই পৌরসভার আরো দুই কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলা অ্যাফেয়ার্স। এদের একজন সংস্থাটির হিসাবরক্ষক মাইনুল ইসলাম ও ‘ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট’ রইছ উদ্দিন।
সংবাদ প্রকাশের পর হিসাবরক্ষক মাইনুল ইসলামকে কোন ধরনের শাস্তি ছাড়াই পাশ্ববর্তী মঠবাড়িয়া পৌরসভায় বদলি করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/