[ad_1]
মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি নাগরিকসহ অন্তত ৩৬ জনকে আটক করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আইএসপন্থী মতাদর্শ ছড়ানো, সহিংস চক্রান্তে যুক্ত থাকা এবং জঙ্গি নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ততার অভিযোগ।
মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের অনেকে ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে নজরদারিতে ছিলেন। এই অভিযানে ধরা পড়াদের বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক, যারা ধর্মীয় পরিচয় ও জিহাদি মতাদর্শের মুখোশে একটি চরমপন্থী চক্র গড়ে তুলেছিল বলে দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে অপরিচিত নয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। পাঁচ তরুণ আত্মঘাতী জঙ্গির হামলায় নিহত হন ২০ জন বিদেশি, দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন রেঁস্তোরাকর্মী।
হলি আর্টিজানের হামলা বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রুত অভিযানে হামলাকারীরা নিহত হলেও তখন প্রশ্ন উঠেছিল—সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে আসা তরুণরা কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে গেল?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার ইঙ্গিত দেয়—চরমপন্থার বীজ এখনো সমাজে রয়ে গেছে। দমনমূলক অভিযান চালানো হলেও প্রতিরোধমূলক শিক্ষা, সচেতনতা এবং বিচারিক স্বচ্ছতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় যাওয়া কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী স্থানীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার দাবি করলেও—যে দেশে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চলছে, বাস্তবতায় দেখা যায় মাঝে মাঝেই বিদেশে গিয়ে সেই চাপে থাকা বাস্তবতা ফাঁস হয়ে পড়ে।
তাদের মতে, জঙ্গিবাদ দমনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজ ও পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ, “হলি আর্টিজান” হঠাৎ আসেনি, মালয়েশিয়ায় ধরা পড়া যুবকরাও হঠাৎ করে সন্ত্রাসবাদে জড়ায়নি।
মালয়েশিয়ার নতুন আইজিপি ড. মোহদ খালিদ ইসমাইল জানান, দেশটিতে জঙ্গিবাদের হুমকি বাড়ছে—তবে জঙ্গিরা বড় কোনো সংগঠনের নয়, বরং একা একা অস্ত্র সংগ্রহ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করছে।
তিনি জানান, জুনের শেষ দিকে মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি কিছু কর্মী আইএস-এর পক্ষে একটি গ্রুপ গঠন করে। তারা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালানো, সদস্য সংগ্রহ এবং অর্থ সংগ্রহ করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল। এ প্রেক্ষিতে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের মধ্যে তিনজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী দাবি করেছেন, দেশে বর্তমানে কোনো জঙ্গি নেই—বরং ‘পেটের দায়ে’ ছিনতাইকারীরা সক্রিয় রয়েছে।
তবে ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, “দেশে পুরোপুরি কোনো জঙ্গি নেই—এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এর আগে অনেকে জঙ্গি সন্দেহে আটক হয়েছেন এবং কারাভোগ করেছেন। আমরা সতর্ক রয়েছি।”
রোববার (৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই, বরং তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন প্রমাণ নেই। গত ১০ মাসে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
তবে একই সময় ঢাকায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা তিন বাংলাদেশিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শনিবার (৫ জুলাই) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. মিজবাহ উর রহমান এই আদেশ দেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাহলে তাদের আদালতে তোলা ও কারাগারে পাঠানো হলো কেন? তারা বলেন, জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নেই—এটা সত্য নয়। বরং অনেক জঙ্গি সংগঠন এখনো সক্রিয় এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বহু জঙ্গি মুক্তি পেয়েছেন। ফলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে বিশ্লেষকরা “নতুন নাটক” হিসেবে দেখছেন।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com