২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমন বক্তব্য উঠে এসেছে একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ে, যার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। এই ফোনালাপে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “ঘটনাস্থলে যারা যাবে, লিথ্যাল ইউপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) নিয়ে যাবে। যেখানেই পাবে, শুট (গুলি) করবে।”
অডিওটি ২০২৫ সালের মার্চে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা যাচাই করে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি এবং বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দুপক্ষই রেকর্ডিংটিকে সম্পাদনাবিহীন ও বিশ্বাসযোগ্য বলে জানায়।
ফাঁস হওয়া এই ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা গণভবনে অবস্থানকালে এক অজ্ঞাত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের অংশ বলে জানিয়েছে বিবিসি। সেসময় রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ চলছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বিশ্লেষণকারী সংস্থা ‘ইয়ারশট’ এবং সিআইডি জানায়, রেকর্ডিংটি স্পিকারে চালিয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং এতে কোনো কৃত্রিমতা বা বিকৃতি নেই।
এই অডিওকে হাসিনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, “এই রেকর্ডিং স্পষ্ট, নির্ভরযোগ্য এবং অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরামর্শক হিসেবেও যুক্ত।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য অডিওটির সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে। দলটির একজন মুখপাত্র বলেন, “এটি যদি সত্যও হয়, তবে তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বৈধ প্রচেষ্টা ছিল।” দলটি দাবি করেছে, কোনো নেতা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণহানির নির্দেশ দেননি।
২০২৪ সালের ওই ঘটনার জেরে এখন পর্যন্ত ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে বাহিনীটির একজন মুখপাত্র।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে গত মাসে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, বেসামরিক জনগণের ওপর সহিংসতা এবং উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হলেও এখনো প্রত্যর্পণ হয়নি।
আওয়ামী লীগ জাতিসংঘের প্রতিবেদন এবং বিবিসির প্রকাশিত তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে দেশ এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার প্রশাসন।
তবে আওয়ামী লীগের সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
https://slotbet.online/