পরিবার পুনর্মিলন–সংক্রান্ত ভিসার নীতিমালাতেও কড়াকড়ি আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে পর্তুগাল সরকার।
দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পর্তুগিজ নাগরিক রনি মোহাম্মদ বলেন, “এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশটির অভিবাসনব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও নিয়ন্ত্রিত করা হবে।”
পর্তুগিজ দৈনিক Público-র বরাতে Schengen News জানিয়েছে, দেশটির মন্ত্রিসভা–বিষয়ক মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো বলেছেন, পর্তুগিজ নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে বসবাসের মেয়াদসহ অন্যান্য শর্ত কঠোর করা হবে।
বর্তমানে পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাসের প্রয়োজন হয়। তবে নতুন আইনে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব আনা হয়েছে।
অভিবাসীদের একটি বড় অংশ নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর থেকে অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষার সময়টিকে বৈধ বসবাসের অংশ হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ১৪ জুন অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষ এই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো জানিয়েছেন, তার সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার।
সরকার জানিয়েছে, অভিবাসনপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে পরিবার পুনর্মিলনের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। জনসেবা ও সমাজে অন্তর্ভুক্তির সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া কর্মসংস্থান–সংশ্লিষ্ট ভিসা কেবল উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভাষাজ্ঞানকেও মূল্যায়নের একটি অংশ হিসেবে যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
সরকার বলছে, প্রথাগত অভিবাসনের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করা এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রে। যার মধ্যে পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত অভিবাসীরাও থাকবেন।
পর্তুগাল হলো সিপিএলপি (পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশগুলোর কমিউনিটি) সদস্য দেশগুলোর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। ব্রাজিল, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, কেপ ভার্দে, গিনি–বিসাউ ও সাও টোমে প্রিন্সিপে থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ পর্তুগালে পাড়ি জমান। এর মধ্যে ব্রাজিলীয়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অনেকেই এখানে কাজের খোঁজে আসেন এবং পরে পরিবার নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। নতুন নীতির কারণে এই সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইনটি ৪ জুন পর্তুগিজ পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হলে রাষ্ট্রপতি, গভর্নর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে পড়ে। ফলে আইনটি নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিসভায় ফেরত পাঠানো হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এই আইন কার্যকর হলে পর্তুগালের অর্থনীতিতে বড় বাধা তৈরি হতে পারে। কারণ, পর্যটনের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশটিতে বিভিন্ন খাতে বিপুল জনবলের প্রয়োজন হয়, যা মূলত পূরণ করে থাকেন বিদেশি অভিবাসীরাই।
ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসীদের জন্য একের পর এক কঠিন নিয়ম চালু হচ্ছে, যা অনেকের কাছে “মরার উপর খাঁড়ার ঘা” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
https://slotbet.online/