[ad_1]
মোংলায় এখন প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশ-প্রশাসনের মাঝে মাঝে মাদকবিরোধী সভা-সমাবেশ করলেও তাতে তেমন কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশ-প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। এক সময় গাঁজা, হুইস্কি, বাংলা মদ ও বিয়ারের রাজত্ব থাকলেও এখন ভয়ংকর মাদক ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মোংলা উপজেলায়।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদক প্রতিরোধ নিয়ে সবাই ভালো ভালো কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে এখন প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বিক্রি। প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হলে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির শুরু হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কীভাবে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করবে?”
জানা গেছে, মোংলা দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। এখানে গাঁজা, বাংলা মদ, হুইস্কি এবং বিয়ারের পাশাপাশি ভয়ংকর ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চলছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই ইয়াবা বিক্রি করছে। এতে ভালো পরিবার থেকেও উঠতি বয়সী তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের জগতে।
ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ করছে না। মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকেই অল্প বয়সী এবং সমাজে ভালো পরিবারের সদস্য বলেই পরিচিত, যা দেখে কেউ সহজে বিশ্বাস করতে চায় না যে তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, “মাদকের ভয়ানক থাবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের কিশোর-তরুণ ছেলেরা। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাচ্ছে না। নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে, সাথে মোবাইল জুয়ার দৌরাত্ম্যও বেড়েছে।”
মাদক ব্যবসায়ীরা তরুণদের হাতে মাদক তুলে দিচ্ছে। অধিকাংশ ভুক্তভোগীই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে অভিভাবকরা গভীর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। যুব সমাজকে বাঁচাতে হলে এসব ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
মোংলা পৌর শহরের কবরস্থান রোড, শ্রমিক আবাসিক এলাকা, বন্দরের পরিত্যক্ত ভবন, নতুন কলোনি সংলগ্ন তিন তলা ভবন, বালুর মাঠ, ছাড়াবাড়ি হেলথ, মেরিন ড্রাইভ রোড, ১ নম্বর জেটি সংলগ্ন টিনশেড, তাহেরের মোড়, মাদ্রাসা রোড, শামসুর রহমান রোড, কুমারখালি, মাছমারা, নারিকেলতলা আবাসন এলাকা, রাজ্জাক সড়ক, বটতলা, কানাইনগর, সিগনাল টাওয়ার এলাকা, মনপুরা বিজ্র সংলগ্ন, চৌকিদারের মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ড, জয় বাংলা সড়ক, শাহজালাল পাড়া, মিয়াপাড়া, পানির প্রজেক্ট এলাকা সংলগ্ন পুকুর পাড়, শ্রমিক সংঘের মাঠ সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া গাছতলা, পিকনিক কর্নার, দিগরাজ বালুর মাঠ, দিগরাজ বাসস্ট্যান্ডসহ বহু স্থানে মাদক কেনাবেচা চলছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এছাড়া ৮ থেকে ১০টি পয়েন্ট দিয়ে কৌশলে মোংলায় মাদকের চালান প্রবেশ করে। মোংলা বাসস্ট্যান্ড, লাউডোব খেয়াঘাট, বাজুয়া খেয়াঘাট, জিউধারা, বৌদ্ধমারি, বানিশান্তা ঘাট, রামপালের পেড়িখালি, বুড়িরডাঙ্গা ও পাকখালির খেয়াপারাপার এলাকা থেকে এসব মাদক পৌছে যায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে।
সম্প্রতি পৌর শহরের রাজ্জাক সড়কের মাদক ব্যবসায়ী তিশার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিক মোবাইলে হুমকি পান। এ ঘটনায় তার ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বিষয়টি মোংলা থানার ওসিকে মৌখিকভাবে জানান। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা তার নামে ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে তাকে হেয় করার চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, তিনি এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
মোংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী বলেন, “যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, মোংলা উপজেলা মাদকমুক্ত করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, মোংলা থানা, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। থানার ওসিকে জানিয়ে দ্রুত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, “মাদকের সঙ্গে কোনো আপোষ নেই। খোঁজ পেলেই মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে মোংলা থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। কাউকে পাওয়া মাত্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com