আবু সাঈদ ও আশুলিয়া মামলার আসামিরা ট্রাইব্যুনালে

Reporter Name / ৮ Time View
Update : রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫


জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকার আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা দুটি আলোচিত মামলার আসামিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) সকালে পৃথক প্রিজনভ্যানে করে এই মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত কয়েকজন গ্রেপ্তার আসামিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ট্রাইব্যুনাল থেকে গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের হত্যা মামলায় পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর রবিবার পর্যন্ত এই মামলার মোট ৩০ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

হাজির হওয়া চার আসামি হলেন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। জানা যায়, সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করা হয়। মুহূর্তটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে। ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ।

এই হত্যাকাণ্ডের জের ধরে ১৭ জুলাই থেকে দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজ। আন্দোলনের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, সরকার ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে, গত ২ জুলাই আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় সংঘটিত গণহত্যা এবং ৬ জনের মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

এ মামলায় পলাতক ৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। পলাতকদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন আশুলিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুল ইসলাম। মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ওই সময় সংঘবদ্ধ হামলার মাধ্যমে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা করে তাদের মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়— যা আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে রংপুর ও আশুলিয়ার ঘটনাগুলো সবচেয়ে নৃশংস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

দুটি মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের একজন কর্মকর্তা বলেন, “তদন্তের ভিত্তিতে আরও আসামিকে চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে। এই মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, “এই হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে এই ঐতিহাসিক অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

জনগণের নজর এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে, যেখানে এই দুটি মামলার বিচারকাজ নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/