চীনা পিএলএ মিয়ানমারে প্রবেশ, নতুন সাম্রাজ্যবাদের সূচনা

Reporter Name / ৫ Time View
Update : রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫


মিয়ানমার নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে কাজ করতে চেয়েছিল এক পরাশক্তি। ধারণা করা হয়, জাতিসংঘের অধীনে মানবিক করিডোরের নামে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে একটি ঘাঁটি গেড়ে বসতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের নানান বাস্তবতা ও রাজনৈতিক কারণে এখনো তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিনদের এই প্রচেষ্টা শুধু গত সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়নি—এই চেষ্টা চলছে দেশটির জন্মলগ্ন, সেই একাত্তর থেকেই। আজও সফল হতে পারেনি আমেরিকা প্রশাসন।

তবে এর মধ্যেই সীমান্তের ওপারে, অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে ঘটে যাচ্ছে অন্য ঘটনা। সেখানে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর নামে প্রবেশ করছে চীনের সৈন্যরা। অনেকটা রাশিয়ার ওয়াগনার বাহিনীর মতো একটি ফোর্স থাকবে সেখানে। মিয়ানমার ও চীন সরকার এ বিষয়ে শুধু ঐক্যমত্যেই পৌঁছেনি, কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এরপর কী হবে, তা দেখার অপেক্ষা করতে হবে। কারণ দেশটির একটি অঞ্চল, আরাকান, ইতিমধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিদ্রোহীগোষ্ঠী দখলে নিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এই এলাকা আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়ে কিছু যুক্তিসহ বক্তব্য দিয়েছিলেন। অবশ্য তা ছিল মানবিক করিডোরসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। পরে তিনি নাটকীয়ভাবে সেই বক্তব্য অস্বীকার করেন। এমনকি জাতিসংঘও তা অস্বীকার করে। জাতিসংঘের দোহাই দিয়ে মানবিক করিডোর দেওয়ার আলোচনা হলেও পরে জাতিসংঘ জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের এমন কোনো আলোচনাই হয়নি। থাক সে বিতর্ক।

প্রসঙ্গ হলো, এপারে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আপাতত পিছু হটেছে। অনেক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই সিদ্ধান্ত আগামী ২০/৩০ বছরেও পরিবর্তন করবে না। মার্কিনিদের নীতিই এমন। কিন্তু ওপারে তো মিয়ানমার খুলে দিয়েছে প্রাইভেট সিকিউরিটি আইন।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট

তাহলে কি মিয়ানমারে ভাড়াটে বাহিনী আসছে চীন থেকে? চীন থেকে এসে তারা কিভাবে কাজ করবে? তারা কি স্থল, নৌ ও আকাশপথে পাহারা বসাবে? নাকি শুধু স্থলভাগেই মিয়ানমারের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে? অথবা তারা মিয়ানমারের বিবাদমান অংশ, অর্থাৎ আরাকানে বিদ্রোহীদের দমনেই ভাড়াটে ফোর্স হিসেবে ভূমিকা পালন করবে?

যদি তাই হয়, তাহলে কি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শেষ পর্যন্ত চীনের হাতেই তুলে দিলো দেশটির খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চল? নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা না-কি দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য চীনের উপর এতটা নির্ভরশীল হলো মিয়ানমার? যদিও চীনের বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলো রাখাইন বিদ্রোহীদের হুমকির মুখে আছে। বিশেষ করে তাদের তেল-গ্যাস পাইপলাইন রক্ষা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের ২৫ জন ভাড়াটে সৈন্য অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এর মধ্যে রয়েছে ২,১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব প্রতিহত করা। এছাড়া রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও বলা হচ্ছে, চীনের স্থাপনাগুলোতে শক্ত পাহারা বসাতেই নিজের বাহিনী পাঠাচ্ছেন শি জিনপিং। মিয়ানমারে চীনের আধিপত্য পুরোনো, তবে এবার চীনের সেনাদের মিয়ানমারে প্রকাশ্য পদচারণা হতে চলেছে স্থাপনা রক্ষার অজুহাতে।

বাংলাদেশ হয়ে এই অংশের গ্যাস ভারতের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অদূরদর্শিতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। রসিক কূটনীতিকরা বলেন, বাংলাদেশ একেবারেই বঞ্চিত হয়নি। তারা মিয়ানমারের তেল-গ্যাসের ভাগ না পেলেও রোহিঙ্গার ভাগ পেয়েছে!

এখন প্রশ্ন হলো, চীনের ভাড়াটে সৈন্যরা মিয়ানমারে প্রবেশ করলে তা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, যার আঁচ বাংলাদেশের উপরও লাগবে না তো? বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে চীনের প্রবেশ আরও সহজ হবে। ফলে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতের উপরও বাড়বে চাপ। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিকট ভবিষ্যতে চীন-ভারত মুখোমুখি সংঘাতে যাবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চীনের পাকিস্তানে বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া ব্রিকসের ঐক্যও তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখছে।

চীন যদি তাদের বিনিয়োগ ও স্থাপনাগুলো রক্ষার নামে মিয়ানমারে প্রাইভেট সিকিউরিটি আইনের আওতায় পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সদস্যদের ঘাঁটি গড়ে তোলে, তবে তা হবে চীনের নতুন সাম্রাজ্যবাদের সূচনা। এরপর হয়তো তারা পাকিস্তানেও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রাইভেট সিকিউরিটির নামে পিএলএ সদস্য মোতায়েন করবে। যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশেও চর্চা করতে পারে। কারণ এসব দেশে চীনের রয়েছে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ও বিশাল বাজার। ফলে এসব দেশে প্রাইভেট সিকিউরিটির নামে চীনের পিএলএ বাহিনীকে অনুমোদন দিতেই হতে পারে নিজেদের ঝুঁকি কমাতে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/