অবিরাম হারে বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা। এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যেই ভারত হয়ে উঠবে বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ—এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার। সংস্থাটি বলছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ভারত ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবাসস্থলে পরিণত হবে।
বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা সর্বাধিক হলেও ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১৪.৩ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.২ শতাংশে। ওই এক দশকে ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠী বেড়েছে প্রায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ। গবেষণা বলছে, মুসলমানদের মধ্যে উচ্চ প্রজনন হারই এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
পিউ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৪ কোটি ৭০ লাখ। এই সময়কালে মুসলমানদের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় সর্বাধিক। ২০১০ সালে বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশে। এই হার আগামীতে আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনসংখ্যার এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৮০ কোটিতে পৌঁছাবে। তবে মুসলমানদের পাশাপাশি ধর্মহীন বা নাস্তিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। গবেষণায় বলা হয়, গত দশকে ২৭ কোটির বেশি মানুষ ধর্মে অনাস্থা প্রকাশ করেছে। ফলে বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৯০ কোটি মানুষ কোনো ধর্ম পালন করে না, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে, একই সময় হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১০ সালে ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ছিল, ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে ৭৯ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটিতে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অনুরূপ চিত্র। ২০১০ সালে খ্রিস্টানরা বিশ্ব জনসংখ্যার ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল, ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশে। আর চীনের জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে বৌদ্ধদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার এই পরিবর্তন আগামী দশকগুলোতে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জনসংখ্যা কাঠামো শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং নীতিনির্ধারণে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
https://slotbet.online/