সীমান্তে অদৃশ্য মৃত্যুফাঁদ: নেই কোনো প্রতিকার

Reporter Name / ৩ Time View
Update : রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫


বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এখন যেন এক অদৃশ্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। নো ম্যান্সল্যান্ডের নিরবতা ভেদ করে হঠাৎ বিকট শব্দ; তারপরই রক্তাক্ত, ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকে মাটিতে। গত এক মাসে এই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন সাধারণ মানুষের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কেউ বাঁশ কাটতে গিয়ে, কেউবা জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে আবার কারও ‘অপরাধ’ কেবল সীমান্ত এলাকায় বসবাস।

সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে আজ রোববার (১৩ জুলাই)। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. হোসেন (৩৩) ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪১ ও ৪২ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি নো ম্যান্সল্যান্ডে বাঁশ কাটতে গিয়েছিলেন। এ সময় একটি স্থলমাইনে পা পড়লে তা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে হোসেনের বাঁ পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি নো ম্যান্সল্যান্ডে ঘটেছে, যেখানে প্রায়ই চোরাকারবারিরা যাতায়াত করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা মাইনে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই চিরতরে পা হারিয়েছেন। বিস্ফোরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই সাধারণ বাসিন্দা, যাদের জীবিকার জন্য প্রতিদিন সীমান্তে যেতে হয়।

সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল, সতর্কতা সাইনবোর্ড, এবং জনসচেতনতা তৈরি না করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

তারা বলছেন, “আমরা অপরাধী নই। শুধু জীবিকার জন্য সীমান্তে যাই। কিন্তু সেখানেই লুকানো থাকে মৃত্যু।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান যেমন গুরুতর হুমকি, তেমনি নিরীহ মানুষদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলতে দেওয়া এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।

স্থানীয়দের মতে, শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর টহল বা উদ্ধার নয়, বরং স্থলমাইন চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করা, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ, এবং বহুপাক্ষিক সমঝোতা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

তারা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে আরো বলেন, আর কত হোসেনের পা উড়ে গেলে কর্তৃপক্ষ সচেতন হবে? আর কত মা-বাবা, ভাই-বোন হাসপাতালে অঙ্গহারা স্বজনকে দেখে চোখের পানি ফেলবেন?

পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষেরা বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা মানে কেবল দেশরক্ষা নয়; মানুষ রক্ষা। এখনই সময়, এই ভয়াবহতা থামাতে বাস্তব, মানবিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/