“সবাই চেয়ে চেয়ে দেখল, একটা মানুষকে কীভাবে মারা হচ্ছে। কেউ একটু সাহায্য করল না। এভাবে কি একজন মানুষকে মারা যায়!”
স্বামীর কবরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন লাকী বেগম। মুখে মুখে শুধু অসহায় আর্তনাদ— সন্তানদের নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন, কীভাবে কাটবে সারাটা জীবন!
এই কান্নার মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিল সোহাগের দুই ছোট সন্তান— সোহানা (১৪) ও সোহান (১১)। নির্বাক চোখে, আঁখিতে জল, মুখে একটাই কথা: “আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমাদের বাবাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলেছে। যারা বাবাকে এত কষ্ট দিয়ে মেরেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”
ঘটনাটি ঘটে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে, যেখানে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। মারধরের পর তার মরদেহের ওপর নাচানাচিও করেছে খুনিরা— যা ভিডিও হয়ে ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। স্তব্ধ হয়ে যায় দেশজুড়ে জনমানুষের হৃদয়।
বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে গত শুক্রবার সকালে সোহাগের দাফন সম্পন্ন হয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সোহাগ। প্রথমে অন্যের অধীনে কাজ করলেও বিগত পাঁচ বছর ধরে নিজেই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
শনিবার সোহাগের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে। তাঁর কথায় উঠে আসে নির্মম এক বাস্তবতা: “মাহিনসহ কিছু আসামি প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করত। সোহাগ তা না দেওয়ায় মোবাইলে ডেকে নিয়ে দোকানেই প্রথমে মারধর করে, তারপর টেনে-হিঁচড়ে এনে রাস্তার ওপর পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলে, শুধু অন্তর্বাসে ফেলে দেওয়া হয় তাকে।”
লাকী অভিযোগ করেন, এজাহার দিতে গিয়েও পুলিশের বাধায় পড়তে হয়েছে। একাধিকবার থানায় ডেকে নিয়ে অভিযোগের ভাষা বদলাতে বাধ্য করা হয়। এমনকি ময়নাতদন্তের পরও দেরিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে।
সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম ভাইয়ের কবরের পাশে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ভাইটা আমার চোখের মনি ছিল। কেউ যেন কষ্ট না পায়, এটা ভাবত সব সময়। ওরা কী করে এতটা বর্বর হতে পারল? ওরা তো মানুষ না, পশু।”
পরিবারের দাবি, যিনি সোহাগকে হত্যা করেছেন, সেই মাহিনই ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, ওঠাবসা— এমনকি মাহিনের খরচও বহন করতেন সোহাগ। বন্ধুত্বের সেই জায়গা থেকেই যে এমন প্রতারণা ও হত্যাকাণ্ড ঘটবে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ।
ঘটনার প্রতিবাদে বরগুনা শহরে গতকাল দুপুরে মানববন্ধনে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ফোরাম, রাজনৈতিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ বিচার দাবিতে একত্র হন বরগুনা সদর রোডে।
সবাই চায়, যেন আর কোনো সোহাগ এমন নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়। যেন একটা জাতি আর কখনও ভিডিও দেখে স্তব্ধ না হয়, বরং প্রতিবাদে গর্জে ওঠে।
https://slotbet.online/