স্যোশাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তনের দাবি করেছেন কেউ কেউ। মূলত গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি’র নেতারা গোপালগঞ্জে সমাবেশ করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়ার পর এই দাবি সামনে আসে।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তনের হুঁশিয়ারি দেন। এনসিপির কর্মী-সমার্থকদের অনেকেই নিজেদের সমর্থনে বেগম জিয়ার করা সেই মন্তব্যটি আবারও সামনে টেনে এনেছেন।
জেলার নাম পরিবর্তনের দাবি জানানোর সাথে সাথে অনেকেই জানান, নবাবী আমলে এই জেলার নাম ছিলো জালালপুর। সেই নবাবী আমলের নামেই গোপালগঞ্জকে ফেরানোর দাবি তোলেন অনেকেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান হিসেবেই নয়, এ জেলার রয়েছে বহু শতাব্দী পুরনো সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য।
গোপালগঞ্জ নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে বিতর্ক দেখা দিয়েছে এর নামকরন নিয়েও। নামকরনের পেছনে যে গল্পগুলো প্রচলিত, তা কতটা নির্ভরযোগ্য?
১৮৭২ সালে গোপালগঞ্জে প্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এটি ছিল বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত। এরপর ১৯০৯ সালে এটি মহকুমায় উন্নীত হয়। অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি- একটি নতুন প্রশাসনিক অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। গোপালগঞ্জ হয়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা।
গবেষকদের মতে, গোপালগঞ্জ জেলার আদি নামগুলোর মধ্যে ‘জালালপুর’ অন্যতম ছিল। বিশেষ করে ফরিদপুর জেলার অধীনে থাকা অবস্থায় এই অঞ্চল ‘জালালপুর পরগনা’ নামে পরিচিত ছিল।
“জালালপুর” নামটি সম্ভবত কোনো মুসলিম শাসক বা প্রভাবশালী স্থানীয় ব্যক্তির নামে রাখা হয়েছিল। “জালাল” শব্দটি আরবি, যার অর্থ মহিমান্বিত বা গৌরবময়।
পরে বৃটিশ আমলে গঠিত থানা ও প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের সময়, জমিদার গোপালের প্রভাবে নামে হয় গোপালগঞ্জ। তবে তাঁর জমিদারির ভৌগোলিক সীমানা, বাড়ি, দেউল বা রাস্তাঘাটের কোনো তথ্য সংরক্ষিত নেই। সম্ভবত তাঁর জমিদারি ছিল ক্ষুদ্র পর্যায়ের, বা সময়ের সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গোপাল রায় সম্পর্কে সরাসরি প্রমাণ খুব সীমিত, কারণ ব্রিটিশ আমলের নথি বা ন্যাম রেজিস্ট্রিতে তাঁর বিস্তারিত নাম তেমনভাবে সংরক্ষিত হয়নি। তবে ফরিদপুর জেলা গেজেটিয়ারে গোপাল রায় নামের উল্লেখ রয়েছে।
আরেকটি মত অনুযায়ী, গোপালগঞ্জ নামটি এসেছে কৃষ্ণ ভক্ত ‘গোপাল’-দের বসবাস ও প্রভাব থেকে। এ ধারণা কিছুটা কল্পনাপ্রসূত হলেও লোককাহিনিতে এটি প্রচলিত।
এছাড়াও গোপালগঞ্জের আদি নাম হিসেবে “রাজগঞ্জ” ও বহিকুন্ডু বলেও অনেকে মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি ছিল মুকুন্দপুর। তবে এই বিষয়ে ঐতিহাসিকভাবে একমত নয় সকল গবেষক।
অনেক ইতিহাসবিদের মতে, গোপালগঞ্জ জেলার আদি নাম ছিল মুকসুদপুর। এই নামে এখনো গোপালগঞ্জের একটি উপজেলা রয়েছে।
জেলা হিসেবে গোপালগঞ্জ স্বীকৃতি পায় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ মহকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা করেন। এরই অংশ হিসেবে ২১টি নতুন জেলা তৈরি হয়।
এর আগে ১৮৭২ সালে গোপালগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি তখন ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯০৯ সালে থানা থেকে উন্নীত হয়ে মহকুমায়। গোপালগঞ্জ নামটি ব্যবহৃত হচ্ছিল থানা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই।
জেলাটি মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত। এই জেলার উত্তরে ফরিদপুর, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট, পূর্বে মাদারীপুর ও বরিশাল, পশ্চিমে নড়াইল জেলা।
এ জেলার পূর্ব সীমানার খাটরা গ্রামের অধিবাসী হিন্দু ধর্মালম্বীরাই এ অঞ্চলে প্রথমে বসতি স্থাপন করে। ধারণা করা হয়, ১১০৯ থেকে ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বল্লাল সেনের আমলের ঘটনা।
https://slotbet.online/