রায়পুরায় নদীতে অস্ত্রবাজি, বালু দস্যুদের তাণ্ডব

Reporter Name / ১১১ Time View
Update : সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫


নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে বলে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত লিখিত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও অস্ত্রধারী নূর ইসলামের নেতৃত্বে, নিলক্ষা ইউনিয়নের হান্নান ও বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের হারুনসহ আরও অনেকে প্রতিদিন চম্বুক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে লিপ্ত।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চারদিক নদী বেষ্টিত মির্জারচর ইউনিয়নে রয়েছে ২৭টি মসজিদ, ৫টি ঈদগাহ, ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩টি কিন্ডারগার্টেন এবং ২টি মন্দির। বহুদিন ধরেই মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে দুটি মৌজার ভূমি, শান্তিপুর আনন্দবাজার, কবরস্থান, তাতুয়াপাড়া মসজিদ, কান্দাপাড়া কবরস্থানসহ প্রায় ৫০০টি বসতঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অধিকাংশ পরিবার আজ ভূমিহীন হয়ে পড়েছে।

এছাড়া আরও জানা গেছে, আরও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হওয়ার পথে।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ, কবির হোসেন, তাজুল ইসলাম, মাইনুদ্দিন, দ্বীন ইসলাম ও কাউছার বলেন, “আমরা এখন সর্বহারা। নিজেদের গ্রাম ছেড়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নিতে হচ্ছে।”

তারা আরও বলেন, “এই ইউনিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পূর্ব-দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন করছে, চালাচ্ছে তাণ্ডব। নবীনগর উপজেলার মেসার্স সামিউল ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান বালু মহল ইজারা নিলেও শান্তিপুর সংলগ্ন মেঘনা নদীতে প্রতিদিন ১৫-২০টি চম্বুক ড্রেজারে বালু তোলা হচ্ছে অবৈধভাবে।”

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও সশস্ত্র হামলার শিকার হতে হয়েছে।

রায়পুরাতে ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে গুলি
রায়পুরাতে ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে গুলি (পুরোনো ছবি)

গত ৫ জুলাই এলাকাবাসীর মানববন্ধনের সময়ও সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আপন ভাই আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে ইমান আলী, নয়ন, মেহেদী, নুরুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহসহ আরও ১৫-২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের উপর অতর্কিতে গুলিবর্ষণ করে হামলা চালায়।

এ অবস্থায় স্থানীয় জনগণ রায়পুরা উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রশ্ন—কেন প্রশাসন গুলিবর্ষণের মতো সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

এ বিষয়ে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. মাসুদ রানা বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। নবীনগর উপজেলায় বালু মহল ইজারা হলেও রায়পুরার মির্জারচরে অবৈধভাবে উত্তোলন চলছে। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি, অভিযান চলমান থাকবে।”

রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুর রহমান (রুবেল) বলেন, “এই উপজেলায় বালু উত্তোলনের ইজারা অনুমোদিত নয়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/