যুক্তরাষ্ট্র সফরে বোয়িং ও গম চুক্তি হচ্ছে!

Reporter Name / ১৮ Time View
Update : রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫


যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক ও বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে নিতে আগামীকাল (২৮ জুলাই) ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। আলোচনার প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ২৫টি বিমান কেনার অর্ডার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি।

রোববার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসে (ইউএসটিআর) ২৯ ও ৩০ জুলাই সরাসরি বৈঠক হবে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আমি নিজে অংশ নেব। আলোচনার চূড়ান্ত ফলাফল ১ আগস্টের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে।”

বোয়িং কেনার পেছনে কৌশলগত পরিকল্পনা
বাণিজ্য সচিব জানান, বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানির কাছে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে। আগে ১৪টি অর্ডার ছিল, এখন ‘রেসিপ্রোকাল’ বা পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে সংখ্যা বেড়ে ২৫-এ দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার ‘বিমানের’ হ্যাঙ্গার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা বোয়িং-নির্ভর। তাই এই ক্রয় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

তবে সরকার একমাত্র বোয়িং-এর দিকেই ঝুঁকছে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “এয়ারবাস বা অন্য কোনো কোম্পানির বিমান কেনার পরিকল্পনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”

সচিব আরও জানান, ভারত ও ভিয়েতনাম যেমন ১০০টি করে বোয়িং অর্ডার দিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টি, তেমনি বাংলাদেশও চাহিদা ও সক্ষমতা অনুযায়ী অর্ডার দিয়েছে। সরবরাহে সময় লাগবে, তবে অগ্রাধিকার অনুযায়ী বোয়িং বিমান পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ
সচিব বলেন, “বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করে, কিন্তু সেটা কখনো একক কোনো দেশ থেকে করা হয়নি। এবার রেড সি এলাকায় সরবরাহ জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে।”

তিনি নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির একটি চুক্তি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিন আমদানির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং তুলা আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

শুল্ক চুক্তি ও বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়
বাংলাদেশের চূড়ান্ত অবস্থান গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে সরাসরি আলোচনা ছাড়াও অনলাইনে কয়েক দফা মতবিনিময় হয়েছে। আলোচনার মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ পলিসি অনুযায়ী বাংলাদেশকে স্বল্প বা সমান শুল্ক সুবিধা নিশ্চিত করা।

বাণিজ্য সচিব বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তারা ঘাটতি কমাতে নানা কৌশল নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য নেয়। তাই আমাদেরও সেখান থেকে কিছু কেনা উচিত, যাতে পারস্পরিক ভারসাম্য থাকে।”

চীন থেকে উৎপাদন স্থানান্তর ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা
চীন থেকে উৎপাদন কারখানা সরানোর বৈশ্বিক প্রবণতার প্রেক্ষাপটে সচিব বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে চীনের ওপর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। আশা করা হচ্ছে, ভারত বা ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুরূপ সুবিধা পাবে।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়লেও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। ব্যবসায়ীরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সরকার কারও ওপর চাপ দিচ্ছে না।”

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/