[ad_1]
এক সময় টেকনাফ স্থলবন্দর ছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র। শত শত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর পদচারণায় জমজমাট থাকত এ বন্দর। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাস ধরে স্থবির হয়ে আছে সব কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক, বিপাকে কয়েকশ ব্যবসায়ী। বন্দরের গোডাউনে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য, এর মধ্যে আলুতে ইতোমধ্যে পচন ধরেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে এ বন্দরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চলছিল। মিয়ানমার থেকে হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, পেঁয়াজ, আচার, তেঁতুল ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য আমদানি হতো; আর বাংলাদেশ থেকে যেত সিমেন্ট, আলু, দেশীয় কাপড় ও প্লাস্টিকের সামগ্রী।
কিন্তু গত বছর থেকে মিয়ানমারের সরকারবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র মধ্যে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে টেকনাফ বন্দরে। নাফ নদীতে ট্রলার আটকানো, মালামাল জব্দসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আরাকান আর্মি। এর ফলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে পড়ে মংডু, আকিয়াব ও সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ।
গত এপ্রিল থেকে আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বন্দরের গোডাউনে আটকে আছে কোটি কোটি টাকার আলু ও সিমেন্ট। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আলুর এক বড় অংশ ইতোমধ্যে পচে গেছে।
দেড় হাজার শ্রমিক এ বন্দরে কাজ করতেন। এখন তারা সবাই বেকার। শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, “কাজ না থাকলে সংসার চলে না। আগে নিয়মিত বন্দরে কাজ করতাম, এখন কোনো উপার্জন নেই। সবাই দুশ্চিন্তায়।”
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহাদুর জানান, “সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয় পক্ষই ক্ষতির মুখে। মিয়ানমারের সরকার আমাদের বাণিজ্যে বাধা দিচ্ছে না, আসল সমস্যা আরাকান আর্মি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত আমরা দরখাস্ত দিয়েছি।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আরাকান আর্মির সৃষ্ট সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা নাফ নদী দিয়ে মালামাল পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতি পুরো বন্দরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
রাজস্ব কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দরের মাধ্যমে আদায় হয়েছিল ৬৪০ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সাড়ে তিন মাস ধরে কোনো রাজস্ব আদায় হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “বন্দরের চলমান সংকট নিয়ে এক মাস আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের অচলাবস্থা শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকে নয়, জাতীয় রাজস্ব ও সীমান্ত কূটনীতিক সম্পর্ককেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা রাখাইন অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত এই সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট মহল রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তায়।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com