রাজধানীর গুলশানে একটি বাসা থেকে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সংগঠনটির সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাকে বলা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্ববায়ক নাহিদ ইসলামের একনিষ্ঠ শিষ্য। এই চাঁদার টাকায় রিয়াদ বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরুও করেছেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, ১৭ জুলাই সকালে গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় পলাতক আসামির তথ্য দিয়ে পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন অভিযুক্তরা। পরে পুলিশ ফিরে গেলে, বাসার কর্তা সিদ্দিক আবু জাফরকে মামলায় জড়ানো এবং গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় ১০ লাখ টাকা।
এরপর আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করে কয়েক দফায় বাসায় যান অভিযুক্তরা। ফোনেও হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। সর্বশেষ গত শনিবার বাসায় গিয়ে টাকা নিতে গেলে পুলিশ হাতেনাতে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করে। তাঁদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। রোববার চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। একজনকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্তরা পুলিশকে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে ভয় দেখিয়েছে। গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির কার্যক্রম চালাত বলে অভিযোগ রয়েছে।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে, অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য এবং সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কোটি টাকার চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিলেন। আইনজীবীদের কেউ কেউ আদালত কক্ষে অভিযুক্তদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কেউ মারধরের চেষ্টা করেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে, আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার আবদুর রাজ্জাক রিয়াদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুরে। সেখানে তাঁর একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। পরিবারের দাবি, ভবনটি বানানো হচ্ছে ঋণ ও সঞ্চয়ের টাকায়। তবে স্থানীয়দের মধ্যে হঠাৎ করে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিবেশিরা দাবি করছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই রিয়াদ চাঁদাবাজি করেই এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
এক প্রকৌশলী জানান, একতলা পাকা ভবন নির্মাণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন পর্যন্ত ছাদ ঢালাইসহ যে কাজ হয়েছে, তাতে ১২–১৫ লাখ টাকার ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা।
মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা প্রথমে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ এবং ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন তিনি। অভিযুক্তরা পরে আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, “এটাই প্রথমবার নয়, বরং এদের শিকড় অনেক গভীরে।”
https://slotbet.online/