[ad_1]
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ঠিক আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই সিদ্ধান্তকে সরকার পক্ষের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন, যা ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত আলোচনার আগেই ‘ডিল সুইটনার’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি
আজ সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও বিষয়ক মহাপরিচালক ড. নাজনীন কায়সার চৌধুরী।
ওয়াশিংটনে ২৯ ও ৩০ জুলাই ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ৩১ জুলাই একটি পরবর্তী সভাও নির্ধারিত রয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা-শুল্ক কমানো। এটি ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
কেন বোয়িং?
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বোয়িংয়ের ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি কৌশলগত কারণে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ভারত ও ভিয়েতনামও শুল্ক আলোচনার অংশ হিসেবে ১০০টি করে বোয়িং এয়ারক্রাফটের অর্ডার দিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।”
ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত ৪৬% পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০%-এ আনা হয়েছে ইতোমধ্যে। ভারতের ক্ষেত্রেও ২৬% ট্যারিফের প্রস্তাব আছে, যা কমাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আশা করছে, তুলনামূলকভাবে কম হারে শুল্ক নির্ধারিত হবে।
‘অর্ডার দিয়েছি, কিনিনি’
তবে বোয়িংয়ের অর্ডার চূড়ান্ত কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচিব জানিয়েছেন, কেনার আগে অর্থনৈতিক বিষয়ক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। তিনি বলেন, “আমরা অর্ডার দিয়েছি, কিনিনি। আইনি প্রক্রিয়া মানা হবে।”
তিনি আরও জানান, বোয়িংয়ের কাছে সরবরাহের সময়সূচি চাওয়া হয়েছে। কারণ অন্য অনেক দেশও অর্ডার দিয়েছে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
বিমান জানে না?
অবাক করার বিষয় হলো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমান এ বিষয়ে ফোনে সাড়া দেননি। বিমানের মুখপাত্র এবিএম রওশন কবীর জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বোয়িং ও এয়ারবাস উভয়ের প্রস্তাব পর্যালোচনার কাজ চলছিল টেকনো-ফাইন্যান্সিয়াল কমিটিতে। হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে এবং বিমানকে এ বিষয়ে শুধু অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
এয়ারবাস কি এখনো আলোচনায় আছে?
২০২৩ সালে সরকার জানায়, এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সময় ফ্রান্স সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশংসাও করে। তবে এখনো ওই চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। বিমানের এমডি আগেই জানিয়েছিলেন, বোয়িং ও এয়ারবাস উভয় সংস্থা তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তারা ২০৩১ সালের আগে কোনো সরবরাহ দিতে পারবে না।
বর্তমানে বিমানের বহরে আছে ১৪টি বোয়িং ও ৫টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। ২০২৩ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৪ সালের মধ্যে ৪৭টি উড়োজাহাজের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ফলে আগামী কয়েক বছরে বিমানের বহর বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
কূটনৈতিক না বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত?
বিশ্লেষক এটিএম নজরুল ইসলাম বলছেন, “এটি কূটনৈতিক ট্রেড পলিটিক্স। বিমান একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই মাঝে মধ্যেই রাজনৈতিক কারণে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। বোয়িং না এয়ারবাস সেই সিদ্ধান্ত বিমানের টেকনিক্যাল টিম থেকেই আসা উচিত।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, বোয়িংয়ের সাম্প্রতিক কিছু দুর্ঘটনার কারণে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলাস্কায় একটি দুর্ঘটনা, এরপর এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারের ঘটনা, সব মিলে মার্কিন জনগণের মধ্যেও তাদের ওপর আস্থা কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অংশ কম
নজরুল বলেন, “বাংলাদেশি এয়ারলাইনের আন্তর্জাতিক বাজারে অংশ মাত্র ২৫ শতাংশ। ৭৫ শতাংশ দখলে রেখেছে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো। আগামী পাঁচ বছরে আরও ২৫ থেকে ৫০টি উড়োজাহাজ দরকার, নয়তো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো।”
আমদানি দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা?
শুধু উড়োজাহাজ নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যান্য পণ্য আমদানির বিষয়েও আলোচনা চলছে। বাণিজ্য সচিব জানান, বেসরকারি খাত সয়াবিন আমদানিতে আগ্রহী এবং তুলা আমদানিও প্রায় চূড়ান্ত। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে তুলার সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিকল্প উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বেশি দামে গম কেনা
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২.২ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, প্রতি টনের মূল্য ৩০২.৭৫ ডলার, যা বৈশ্বিক গড় মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও ৩ জুলাইয়ের মার্কিন বাজারে দাম ছিল ২২৫ ডলার এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের গম আরও সস্তা ছিল।
বাণিজ্য সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে বছরে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনে। সেই তুলনায় বাংলাদেশকেও কিছু রপ্তানি করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা কাউকে চাপ দিচ্ছি না, তবে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের উচিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনার দিকে এগিয়ে আসা।”
সরকারি ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গম কেনা হোক বা উড়োজাহাজ; এগুলো বড় একটি বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস। আমরা আমাদের অবস্থানকে যুক্তিসঙ্গত ও কৌশলী রাখতে চাই।”
এই পুরো প্রক্রিয়া কেবলই ব্যবসা নয়, বরং বড় পরিসরে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করার প্রয়াস বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com